‘তালাকের ৮০ হাজার দিল, বাকি ৪০ হাজার গেল কই’

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ২২:৪২
ভালোবাসা, বিবাহ, তারপর তালাক সবই যেন এক চুক্তিপত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে টাকা লেনদেনের খেলায়। ঘটনাটি ঘটেছে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ওমরগাঁও গ্রামে। যেখানে ইউপি সদস্যের বাড়িতে বসে মাত্র ৮০ হাজার টাকায় এক গৃহবধূকে তালাক নিতে বাধ্য করা হয়, যদিও শুরুতে চুক্তি ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার।
ভুক্তভোগী সেতু আক্তার প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ করেছিলেন সুমন মিয়াকে। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ জুলাই সুমন মিয়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একতরফাভাবে তালাকের ঘোষণা দেন, যা ইসলামী আইন ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ ও অকার্যকর। এরপর চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিমের বাড়িতে বসে সামাজিক সমঝোতার নামে এক প্রহসন চলে। সেখানে সেতু আক্তারকে ৮০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে তালাক নিতে বাধ্য করা হয়। অথচ চুক্তি ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার।
ভুক্তভোগী সেতু আক্তার বলেন, ‘আমি তালাক চাইনি। আমার কাবিনে ছিল ৪ লাখ টাকা। অথচ আমাকে জোর করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। শুনেছি এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে সুমনের পরিবার, বাকি ৪০ হাজার টাকা গেল কই?’
সুমনের বাবা রমজান আলী দাবি করেছেন, তিনি ইউপি সদস্যদের হাতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে রমজান আলীর কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকশেদা ও সদস্য আব্দুল করিম। তবে ভুক্তভোগী সেতুকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা। বাকি ৪০ হাজার টাকা গেল কোথায়? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
কলমাকান্দা ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা চামেলি খাতুনের ভাষ্য, শুধু নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তালাক ঘোষণা আইনত অবৈধ ও অকার্যকর। তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তালাক নোটিশ প্রদান, ৯০ দিন ইদ্দতকাল এবং পুনর্মিলনের সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। এসব কিছুই এখানে মানা হয়নি।
এ বিষয়ে কলমাকান্দা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল হক পাঠান বলেন, একজন নারীর সম্মতি ছাড়া চাপের মুখে নগদ টাকার বিনিময়ে তাকে তালাক দেওয়া শুধু আইন বিরুদ্ধই নয় বরং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনাটি সমাজের কিছু অংশে প্রচলিত ‘মীমাংসা’ নামের অসামাজিক চাপ প্রয়োগের নগ্ন চিত্র।