ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বন গেছে বনবাসে!

বন গেছে বনবাসে!

কবীর উদ্দিন সরকার হারুন ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ | ১৫:১৩

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় বনখেকো ও ভূমিদস্যুরা। উপজেলার এনায়েতপুর ও সন্তোষপুরে তাদের মদদে অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার একর সংরক্ষিত বনের সরকারি জায়গা। এসব জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে কৃষি ও পোলট্রি খামার, হ্যাচারি, ফিড মিল, করাতকল, বাংলোবাড়ি, ফুলের বাগান, বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সৃজনকৃত সামাজিক বনায়নের বাগানসহ ভুয়া কাগজ দেখিয়ে বনের জায়গা দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। তাদের দাপটে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের থাকতে হচ্ছে নীরব। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় মামলা-পাল্টা মামলা ও হামলার ঘটনাও ঘটছে।

সরেজমিনে এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা মৌজার বন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অবাধে চলছে বন ধ্বংস ও জায়গা দখল। পাশাপাশি রমরমা প্লট-বাণিজ্য চালাচ্ছে একশ্রেণির দালালচক্র। এনায়েতপুর বনবিটে প্রায় তিন হাজার একর জায়গা থাকলেও সিকিভাগও নেই বন বিভাগের দখলে। স্থানীয় দুর্বৃত্তরা বনের জমি দখলে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে তা চড়া দামে বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, সেই প্লটের নামে মোটা অঙ্কের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও করে দেয় দালালরা। কাগজে-কলমে এনায়েতপুর বনবিট এলাকাকে অনেক দিন আগেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে এ জায়গা বন বিভাগের হাতে নেই।

এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও দুলমা গ্রামে সবচেয়ে আলোচিত 'এসপি সাহেবের কৃষি খামার'। কৃষিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের নামে বন বিভাগের ১১ একর সৃজন করা বাগানসহ অন্তত ২০ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। একইভাবে এনায়েতপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১১ একর সৃজন করা আকাশি বাগান সীমানাপ্রাচীর দিয়ে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

এনায়েতপুর-উথুরা বনবিট রেঞ্জ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি বদলি হয়ে এখানে এসে জানতে পারি, ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে সৃজন করা আকাশি বাগানসহ বনের জায়গা সীমানাপ্রাচীর দিয়ে দখল করেছেন। কাহালগাঁও মৌজায় ৩৩৯ নম্বর দাগে বনের এক একর জমি দখল করে চারপাশ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ঘর। এনায়েতপুর ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের নুরুল ইসলাম মাস্টার নামে-বেনামে বনের প্রায় ২০ একর জায়গা দখলে নিয়েছেন। নাওগাঁও ইউনিয়নের সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার আবদুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মুনসি পাহাড়ে সন্তোষপুর বিটে দখল করে নিয়েছেন বনের জমি। সন্তোষপুর বনবিটে প্রায় চার হাজার একর সামাজিক বনায়নসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে, যার মধ্যে এক হাজার একরের বেশি জায়গা বেদখল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সামাজিক বনায়নে প্রকৃত হতদরিদ্ররা প্লট না পেলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে বরাদ্দ নিয়েছে। বিট কার্যালয়ের তথ্যমতে, বন দখলের ঘটনায় ২০১৬ সালে তৎকালীন এনায়েতপুর বনবিট কর্মকর্তা রুহুল আমিন বাদী হয়ে কবিরুল, মাসুমা বেগম, আবদুল হক তালুকদার, মজিবুর রহমান রিয়াজ গংয়ের নামে মামলা করেন। একই বছরে পাল্টা মামলা করেন ওই মামলার বিবাদী কবিরুল।

সন্তোষপুর বনবিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান বলেন, উপকারভোগীরা জমিতে চারা লাগানোর পর বেশি মুনাফার আশায় সেই চারাগুলো অনেক সময় নষ্ট করে ফেলে। পরে বনের জমিতে চাষাবাদ করে।

বন দখলের ঘটনায় সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি সামাজিক বনায়ন কমিটিতে আছি এবং প্রথমে এই জায়গায় গাছ লাগিয়েছি। আমার জমির পরিমাণ বেশি তো থাকবেই।

এনায়েতপুর-উথুরা বনবিট রেঞ্জ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, তিনি যোগ দেওয়ার আগেই বনের প্রায় অর্ধেকের বেশি জায়গা স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী মহল। বনের এসব জায়গা উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

×