চট্টগ্রামে ভয়ংকর জনপদ বায়েজিদ বোস্তামী

আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ | ১৪:৩৯
একের পর এক খুন, হামলা-পাল্টা হামলায় ভয়ংকর জনপদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা। চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসা, সরকারি পাহাড় ও খাসজমি দখল-বেদখল, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময়ই এলাকাকে অস্থির করে রাখে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। অনুসন্ধানে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে দুই গডফাদারের নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও স্থানীয় যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী দিদারুল আলম দিদার। সর্বশেষ গত রোববার রাতে ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইমন রনি হত্যাকাণ্ডেও আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের অনুসারীদের নাম এসেছে। প্রতিটি ঘটনার পর চুনোপুঁটি ধরে দায় শেষ করে পুলিশ। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় গডফাদাররা।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক সমকালকে বলেন, যে কোনো ঘটনার পর তদন্তে যাদের নাম এসেছে, তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইমন হত্যায়ও মামলায় যাদের আসামি করা হচ্ছে এবং তদন্তে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।
জানা গেছে, নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চলসহ বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন দুই শতাধিক কারখানায় চাঁদাবাজি, বিতর্কিত ও পাহাড়ি খাসজমির দখল-বেদখল ঘিরে সক্রিয় রয়েছে যুবলীগ নামধারীরা। আরেফিন নগর, অক্সিজেন, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা, পলিটেকনিক ও শেরশাহ এলাকায় বিভিন্ন পোশাক কারখানা, নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদাবাজি ও পাহাড়ি ভূমি দখলের অভিযোগ রয়েছে মহিউদ্দিন-দিদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার জেরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানা ছাত্রলীগের একাংশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ইমনও আধিপত্য ও চাঁদাবাজির জেরে খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি প্রিটন সরকার সমকালকে বলেন, বায়েজিদের পাহাড়ি ও সমতল এলাকা ঘিরে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায় কিছু অপরাধী চক্র। তাদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে বিভিন্ন সময় খুনের ঘটনা ঘটে। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রিপনও আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি।
মহিউদ্দিন-দিদার বাহিনীর হাতে যত খুন :২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বায়েজিদের শেরশাহ এলাকায় মহিউদ্দিন-দিদার বাহিনীর হাতে খুন হন বাংলাবাজার হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন। এ ঘটনায় আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, দিদারুল আলম, জসিমসহ ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৭ জুন রাতে চট্টেশ্বরী সড়কের মুখে প্রকাশ্যে খুন করা হয় আবু জাফর অনিক নামের এক যুবককে। এ মামলার প্রধান আসামি মহিউদ্দিন তুষার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের অনুসারী। এ ছাড়া একই বছরের ২৭ এপ্রিল ডিশ ব্যবসার বিরোধের জের ধরে নগরের চকবাজার ডিসি রোডের গণি কলোনি এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে যুবলীগ নেতা ফরিদুল ইসলামকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত মোহাম্মদ ফয়সালও মহিউদ্দিনের অনুসারী। এর আগে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইয়াসির আরাফাত ইমন খুনেও জড়িত ছিল ফয়সাল।
এ বাহিনীর বায়েজিদ এলাকায় সক্রিয় সন্ত্রাসীদের মধ্যে মো. এমদাদ, মিল্টন বড়ুয়া, মহিন উদ্দিন, ফয়সাল ওরফে ডিবি ফয়সাল, বিহারি ফজল, রিপন, মামুন, ওয়াহাব, আশিকুর রহমান, নুর হোসেন, মাছ রফিক, সিরাজ, আনোয়ার, সানি, ফজলে রাব্বি, মো. মোমিন, শওকত উল্লাহ, মো. পারভেজ, শিপন, রায়হানসহ শতাধিক তরুণ রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সমকালকে বলেন, 'কোনো সন্ত্রাসীকে আমি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই না। এলাকার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একটা খুন হয়েছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে আমাদের গ্রুপের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।' অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে কল করা হলে দিদারের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ইমন হত্যায় ছয়জন আটক :এদিকে, ইমন হত্যার ঘটনায় বায়েজিদের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন সোহেল ওরফে শালা সোহেল, লিটন, আহসান কবির, ফজর আলী, নুরুল আলম কালু ও রুবেল। ছয়জনই আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের অনুসারী রিপন গ্রুপের কর্মী।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় আরও যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
নিহত ইমনের মা আয়েশা বেগম বলেন, যারা চাঁদাবাজি করে, কিশোর গ্যাং পালে তারাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করত; তাই তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।