ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

প্রস্তাবিত সুরক্ষা আইনে সরকারের স্বার্থ রক্ষা হবে

প্রস্তাবিত সুরক্ষা আইনে সরকারের স্বার্থ রক্ষা হবে

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৭:৫৩ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৭:৫৩

উন্নত নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা দিতে উপাত্ত সুরক্ষা আইন রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রস্তাবিত আইনটিতে সরকারের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। এ আইনে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ঝুঁকিতে পড়বে। সোমবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন: কী সুরক্ষা? কার ক্ষতি-কার লাভ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার ওপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইমুম রেজা তালুকদারের উপস্থাপনায় বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত’র সংজ্ঞা নেই। উপাত্তের শ্রেণিবিন্যাসও করা নেই। খসড়া অনুযায়ী সরকার ও এজেন্সির মহাপরিচালক এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে উপাত্ত সরবরাহের আদেশ দিতে পারেন। এ আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিচারিক জবাবদিহির কাঠামো এ আইনে নেই। নির্বাহী আদেশেই উপাত্ত সরবরাহের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এতে ভিন্নমতাবলম্বী ও গঠনমূলক সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনটির অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

উপস্থাপনায় সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, ‘প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনে উপাত্ত দেশেই স্থানীয়করণের কথা বলা হয়েছে। আইনে নির্বাহী বিভাগকে বিচার বিভাগের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা না রেখে অবাধ ক্ষমতা দিলে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। এ ছাড়া উপাত্ত স্থানীয়করণ ও স্থানান্তর নীতি বিদ্যমান পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আবার অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে; যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।’

ওয়েবিনারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য দেশে এ ধরনের আইন হয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, নাগরিকেরা এখানে প্রধান বিষয় নন, প্রধান বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের তথাকথিত সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা। যেটির সংজ্ঞায়ন নিয়ে সমস্যা আছে।’

নাগরিকের সুরক্ষার চেয়ে সরকারের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘উপাত্ত সুক্ষার জন্য আইনের দরকার আছে। কারণ, ব্যক্তিগত তথ্যের যে অপব্যবহার হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক জায়গায় চলে গেছে।’

উপাত্ত স্থানীয়করণ প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনটি যদি ইউরোপ-আমেরিকার আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, তবে সেসব দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ হারাবেন। ভারতে আইনটি করার বেলায় এই বিতর্ক হয়েছে। দেশটি সে খসড়া প্রত্যাহার করেছে। বাংলাদেশও ভারতকে এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারে। এটা নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে আরও আলাপ-আলোচনা হোক।’

আলোচনায় বক্তারা জানান, নির্বাচনের আগে সরকার কিছু আইন করে থাকে দমন ও নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে। উপাত্ত সুরক্ষার যে খসড়া আছে, তা পাস হলে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের অধিকার, ব্যক্তির গোপনীয়তা সবকিছুই ঝুঁকিতে পড়বে।

আরও পড়ুন

×