শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৯৯-এ শত শত কল

আব্দুল হামিদ
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ০২:৪০ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ | ০২:৪৫
পবিত্র ঈদুল আজহার সময় চার দিনের সরকারি ছুটিতে ‘জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯’-এ শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে শত শত কল এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছে মারামারির অভিযোগ। সাধারণ মানুষ এ নম্বরে অভিযোগ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো অভিযোগে থানা পুলিশকে ফোন করলে তারা সেবা দিতে গড়িমসি করে। কিন্তু জাতীয় সেবায় ফোন করলে তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়া যায়। তখন থানা পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে আসে। এ ছাড়া ছোটখাটো বিষয়েও এখানে ফোন করলে প্রতিকার মিলছে।
ঈদের চার দিনের (২৭ জুন থেকে ১ জুলাই) ছুটিতেও জরুরি সেবায় শব্দদূষণ, মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনা, পারিবারিক সমস্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সাইবার অপরাধের বেশি অভিযোগ পায় পুলিশের এই ইউনিটটি। এ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগেও অসংখ্য কল পায় তারা। চার দিনে জাতীয় জরুরি ৮ হাজার ১০৬টি অভিযোগ এসেছে এখানে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ঈদের দিন সন্ধ্যার পর মহল্লার কিশোর-তরুণরা বাসার পাশেই সাউন্ডে বক্স দিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজাতে থাকে। তাদের নিষেধ করলে ঝামেলা আরও বাড়বে– এই ভয়ে ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানাই। পরে পুলিশ এসে তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
বিষয়টি স্বাগত জানিয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সমকালকে বলেন, এটি ভালো লক্ষণ যে, শব্দদূষণের বিরুদ্ধেও প্রতিকার পাওয়া সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। একটি গবেষণায় উঠে আসে, ২০১২ সালে ঢাকায় মানুষ গড়ে দৈনিক ১২ ঘণ্টা শব্দদূষণের মধ্যে থাকত। বর্তমানে তা ১৪ ঘণ্টায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ যেন ৯৯৯-এ ফোন করে প্রতিকার পায়, সে জন্য পুলিশকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
যশোরের মনিরামপুরের গরুহাটা মোড়ের মুদি দোকানি দীপু মণ্ডল ঈদের পর দিন ৯৯৯-এ ফোন করে হামলার অভিযোগ দেন। তিনি সমকালকে বলেন, ওইদিন দুপুরের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন হোসেনের কাছে দোকানের বাকি (পাওনা) টাকা চাইলে তিনি প্রথমে তাঁকে গালমন্দ করেন। পরে বাসা থেকে লাঠি নিয়ে হামলা করতে আসেন। এ সময় কোনো উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে মনিরামপুর থানা থেকে পুলিশ এসে অভিযোগ দিতে বলেন। পরে হুমায়ুনের বাপ-চাচারা এসে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেন।
৯৯৯-এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই সহায়তা চেয়ে কল এসেছে গড়ে দৈনিক ২ হাজার ২৬টি। এর মধ্যে মারামারি ১ হাজার ৭৪৭টি, সড়ক দুর্ঘটনা ৬৩৬টি, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ৪৯৬টি, শব্দদূষণ ৪৬০টি, জুয়াখেলার অভিযোগ ৪৫৫টি, অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল সার্ভিস-সংক্রান্ত ৩৬৮টি, পারিবারিক সমস্যা ৩৫০টি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ৩০১টি, জমিসংক্রান্ত সমস্যা ২৮০টি ও সাইবার অপরাধের ২৭৮টি কল আসে। এ ছাড়া ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য অভিযোগে আরও ২ হাজার ৭৩৫টি কল আসে। সব অভিযোগের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণী বলেন, ঈদের পরদিন পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচারা তাঁর ভাইয়ের ওপর হামলা করেন। কূলকিনারা না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে সমাধান করে দেয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শুনেছেন জাতীয় জরুরি নম্বরে ফোন করলেই সেবা পাওয়া যায়। সেদিন প্রমাণ পেয়েছেন।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার সমকালকে বলেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে পুলিশের জরুরি সেবা জনপ্রিয় হয়েছে। আগে ঢাকার মধ্যে বেশি অভিযোগ এলেও এখন সারাদেশ থেকে অভিযোগ আসছে। আমাদের কাছে প্রতিটি অভিযোগই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অভিযোগ খাটো করে না দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে অনুরোধ জানানো হয়। ঈদের ছুটিতে তা অব্যাহত ছিল। এবার ভুয়া কলের সংখ্যাও ছিল কম।
- বিষয় :
- ‘জাতীয় জরুরি সেবা
- ৯৯৯
- জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯