পার্বত্য সমস্যার সমাধান মতৈক্যের ভিত্তিতে

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০০ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৯:৪৯
শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে শান্তি ফেরেনি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমি কমিশন কার্যকর, নির্বাচিত জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ ব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোও বাস্তবায়ন হয়নি। এ সুযোগে সেখানে পাহাড়িদের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত যেমন বেড়েছে, তেমনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ লেগেই আছে। বৈষম্যমূলক পার্বত্যনীতি এখনও পার্বত্যাঞ্চলে বহাল। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ পাহাড়ের জনজীবন। তবে সামরিক কায়দায় নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সমস্যার সমাধান করতে হবে রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে মানবিকভাবে। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের অগ্রাধিকার তালিকায় পার্বত্য শান্তিচুক্তির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তিতে গতকাল সোমবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর: প্রত্যাশা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, চুক্তির ২৭ বছর পরেও পাহাড়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। শাসকগোষ্ঠী জবরদস্তি করে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছে। কিন্তু সামরিক কায়দা কোনো সমাধান নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা; যা সমাধান হবে রাজনৈতিকভাবে, মানবিকভাবে। ২৭ বছর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা চুক্তিকে উপেক্ষা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক আগ্রাসন চলছে। এগুলো বন্ধ করা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরবে না।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘২৭ বছর আগে হওয়া পার্বত্য চুক্তিও শুধু বাস্তবায়ন চায় বললেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার দরকার হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসের কর্মকাণ্ডে কি আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের আলামত দেখতে পাচ্ছি? মোটেই না। প্রথম সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় হচ্ছে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি। শুধু কাগজে লিখলেই দায়িত্ব শেষ হয় না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক চিন্তার পরিবর্তন হয়নি। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রের মানসপটের পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথেইন প্রমীলা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সবসময় নিরাপত্তার চোখে না দেখে সেখানকার অধিবাসীদের মানবিক মর্যাদায় বেঁচে থাকার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি দিলেই পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অনিক রায় প্রমুখ।
ভূমি সংস্কার হলেই চুক্তি বহুলাংশে সার্থক হবে: পার্বত্য উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, ভূমি সংস্কার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বহুলাংশে সার্থক হবে। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমি ইস্যু সমাধানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে ভূমি সংস্কারের কাজ করা যেতে পারে। পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক কাউন্সিলের কাজকে আরও আধুনিকভাবে সাজাতে হবে। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব বহন করে।’ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শামিমুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ঢাকার আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তুষার কান্তি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ড. নীলু কুমার তঞ্চঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
- বিষয় :
- পার্বত্য চুক্তি