ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি

রমজানের পণ্য আমদানিতে নিশ্চিত করতে হবে ডলার

রমজানের পণ্য আমদানিতে নিশ্চিত করতে হবে ডলার

প্রতীকী ছবি

মেসবাহুল হক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:৪৫ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:৪৫

আগামী মার্চে শুরু হতে যাওয়া রমজানে চাহিদা মেটাতে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ বেশি প্রয়োজনীয় সাতটি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের দরকার হবে। এসব নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রমজান সামনে রেখে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ ৮ পণ্যের আমদানিতে এলসি মার্জিন বা নগদ জমা নূ্যনতম পর্যায়ে রাখা এবং এসব পণ্য ৯০ দিনের বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর আরেক প্রজ্ঞাপনে এলসি মার্জিনে ছাড় দেওয়ার তালিকায় যুক্ত হয় চাল ও গম। তবে ভোগ্যপণ্য আমদানি ও সরবরাহকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের জন্য শূন্য বা কম মার্জিনে এলসি খোলার সুবিধা আগে থেকেই আছে। ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা মনে করেন, শুধু মার্জিনে ছাড় দিলে তেমন কাজ হবে না, আমদানিকারকরা যাতে পর্যাপ্ত ডলারের সংস্থান পান এবং এলসি খুলতে কোনো সমস্যায় না পড়েন তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, রমজানের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিয়মিত এলসি খোলা অব্যাহত রাখা জরুরি। একই সঙ্গে পণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় পরিশোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এলসি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সবরবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নিত্যপণ্যের বাজার জনসাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেন নিয়মিত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে, এমন নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওই চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল, চিনি এবং গম আমদানিতে আড়াই বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। এর মধ্যে ৯৭ কোটি ৪০ ডলার ব্যয়ে ৭ লাখ টন ভোজ্যতেল, ৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয়ে ২২ লাখ টন গম এবং ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৮ লাখ টন চিনি আমদানির প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া ২ লাখ ১০ হাজার টন ছোলা আমদানিতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ১ লাখ ৫৭ হাজার টন মসুর ডাল আমদানিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ৫৯ হাজার টন খেজুর আমদানিতে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হবে।

গত ৪ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে 'বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটি'র সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, এলসি খোলাসহ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন।

এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, ডাল, মটর, পেঁয়াজ ও মসলা আমদানিতে এলসি মার্জিন নূ্যনতম রাখতে বলে। গত ১৪ ডিসেম্বর আলাদা সার্কুলারের মাধ্যমে চাল ও গমের এলসি খোলার ক্ষেত্রে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এলসি মার্জিন শূন্য বা কম রাখা কিংবা বাকিতে পণ্য আমদানির সুযোগ আগ থেকেই রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে এসব পণ্য এনে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়ে, তারা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এখন সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের বিপরীতে ৩৬০ দিন পর্যন্ত বাকিতে আমদানি করতে পারে। ফলে বড় আমদানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ভিন্ন কোনো সুবিধা দেবে না।

প্রসঙ্গত, কয়েক মাস ধরে ডলার সংকটে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমছেই। গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। রিজার্ভ কমে আসায় তৈরি হওয়া সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক এবং জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা থেকেও ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×