ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ট্রেজারি বিলের সুদের ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে মার্জিন

ট্রেজারি বিলের সুদের ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে মার্জিন

ওবায়দুল্লাহ রনি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুলাই থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদ তথা স্মার্টের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করতে পারবে ব্যাংক। তবে স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বাড়লে-কমলে পরিবর্তন হবে মার্জিনের হার। যদিও সুদহারের নতুন ব্যবস্থা কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।

 ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা শুরুর পর ঋণ চাহিদা তলানিতে নামে। সরকারও তখন তেমন ঋণ নিচ্ছিল না। যে কারণে ট্রেজারি বিলের সুদহার অনেক কমে যায়। সুদহার কমতে কমতে ২০২১ সালের জুনে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ নামে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশে। আর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন ছয় মাসের গড় সুদহার ছিল শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। অথচ ওই বছরের জুনে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ট্রেজারি বিলে এর আগে সুদহার এতটা না কমলেও ৩ শতাংশের আশপাশে ছিল অনেক সময়। বিশেষ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ এই তিন বছর অনেক ব্যাংকে ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে ছিল এ হার। আবার ২০১২ সালে ১৮২ দিন ট্রেজারি বিলের সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে ওঠে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ব্যবস্থা কতটা টেকসই হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরেই তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, বাজারে তারল্যের অবস্থা অনুযায়ী সুদহার ওঠানামা করবে। ব্যাংকগুলোর কাছে যদি অনেক তারল্য থাকে, মূল্যস্ফীতি যদি অনেক কমে যায় তখন কম সুদে ঋণ বিতরণ করলে তো কোনো সমস্যা নেই। এ ছাড়া বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে মার্জিনের হার পরিবর্তন করতে কোনো বাধা নেই।

জানা গেছে, রেফারেন্স রেট অনেক কমলে মার্জিন বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার রেফারেন্স রেট অনেক বাড়লে তখন মার্জিনের হার কমানো হবে। এমনকি ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহারের ভিত্তিতে মার্জিন শূন্য করা হতে পারে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, রেফারেন্স রেট যদি ৩ শতাংশে নামে তখন যদি ৬ শতাংশ মার্জিন দেওয়া হয়, তা হবে হাস্যকর। কেননা, রেফারেন্স রেটের চেয়ে মার্জিনের হার বেশি হলেই সবার মধ্যে প্রশ্ন উঠবে– ব্যাংকগুলো কি এ হারে লাভ নিচ্ছে। তখন আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেবে। নতুন সুদহার বর্তমান বাস্তবতায় ঠিক থাকলেও এটা টেকসই না।

সুদহারের নতুন ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে, ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সাধারণভাবে ৩ শতাংশ যোগ করবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ করবে ৫ শতাংশ। তবে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণে স্মার্টের সঙ্গে যোগ করতে পারবে ২ শতাংশ। সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি কেনার ঋণে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়া যাবে। আগামী ১ জুলাই থেকে এ পদ্ধতি কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্টের পরীক্ষামূলক তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে। সর্বশেষ মে মাসের স্মার্ট দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বর থেকে প্রকাশিত ছয় মাসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রতি মাসে স্মার্ট একটু করে বাড়ছে। গত ডিসেম্বরে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৭৫, জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৬, ফেব্রুয়ারিতে ৭ দশমিক শূন্য ৪, মার্চে ৭ দশমিক শূন্য ৭ এবং এপ্রিলে ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন

×