ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফৌজদারি মামলার ক্ষমতার জন্য ভোক্তা আইন সংশোধন হচ্ছে

ফৌজদারি মামলার ক্ষমতার জন্য ভোক্তা আইন সংশোধন হচ্ছে

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ফৌজদারি মামলা করার ক্ষমতা দিয়ে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান এ তথ্য দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিবিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালা যৌথভাবে আয়োজন করে ইআরএফ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

 ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচ থেকে ছয়টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। অনেকেই অভিযোগ করেন, ভোক্তা অধিদপ্তর এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান না চালিয়ে মার্কেটের ছোট দোকানে অভিযান চালায় এবং জরিমানা করে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ভোক্তা অধিদপ্তরের টিম বাজারের পাশাপাশি দেশের সব বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের কারখানায় অভিযান চালায় এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে। সুতরাং ভোক্তা অধিদপ্তর কোনো ব্যবসায়ীকে ছাড় দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আইনি বাধার কারণে ইচ্ছা থাকার পরও তারা সবকিছু করতে পারছেন না। অপরাধ প্রমাণ হলে হয়তো এখন অধিদপ্তরের টিম শুধু জরিমানা করতে পারছেন। তবে বিদ্যমান আইনে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা কে করবে, তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এ জন্যই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান অপরাধ করলে ফৌজদারি মামলার আওতায় আনা যায়।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর বাজারে আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ১ আগস্ট থেকে অভিযানে নামবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে শুধু প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে হবে। সারাদেশে একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে ভোক্তা অধিকারকে সহযোগিতা করবে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন।

গত বছরের ২০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ নেয়, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর বাজারে আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামবে।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় বেশি লাভ করতে চান। আবার বাজার নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় সরকারও ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে করে বাজারে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। আসলে গুটিকয় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্যের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে। এসব প্রতিষ্ঠান যখন সিন্ডকেট করে, তখন বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অর্থনীতির সূত্র হচ্ছে, কখনও মূল্যস্ফীতি বাড়লে একটা পর্যায়ে গিয়ে তা আবার নিম্নমুখী হয়। কিন্তু অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে না দিয়ে কৃত্রিম চাপ দেওয়া হলে তখনই বিপত্তি ঘটে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজারের কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। বর্তমানে যে কৃত্রিম মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে অবশ্যই রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

×