ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

কিশোর অপরাধ দমনে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান

কিশোর অপরাধ দমনে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান

মেশকাতুন নাহার

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০

শিল্পবিপ্লবের ফলে যেসব নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, তার মধ্যে কিশোর অপরাধ অন্যতম। শিল্পবিপ্লবের ফলে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের বিকাশ ঘটে। ফলে নারী-পুরুষ উভয়েরই কারখানায় কর্মসংস্থান হয়। সে ক্ষেত্রে পরিবারের নির্ভরশীল শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এমন পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধই কিশোর অপরাধ।
কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অপরাধ করে থাকে। উদ্দেশ্যহীনভাবে শুধু কৌতূহলেও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের মতো কোনো পরিকল্পনা করে তারা অপরাধ করে না। কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত যে ধরনের অপরাধ করে তা হলো পকেটমার, চুরি, ছিনতাই, স্কুল-কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, জুয়া খেলা, নেশা করা, পর্নো ছবি দেখা প্রভৃতি।
ইদানীং কিশোররা গ্যাং তৈরি করে অপরাধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মা-বাবা উভয়ের কর্মক্ষেত্রে থাকার কারণে একদিকে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে; অন্যদিকে শিশু-কিশোররা মোবাইল গেম, ইউটিউবে আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ ফেসবুক, মেসেঞ্জারে অসৎ সঙ্গীর সঙ্গে চ্যাটিং করে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। মা-বাবার আদেশ-উপদেশ, লেখাপড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর।
আমরা জানি, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু-কিশোররা যদি বিপথগামী হয় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবগুলোর মধ্যে পারিবারিক ভাঙন, বিয়ে বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা এর বিশেষ উদাহরণ, যার ভুক্তভোগী বেশিরভাগ শিশু-কিশোর। এর ফলে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। এমন পরিবারের শিশু-কিশোররা অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। তা ছাড়া বস্তি এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশু-কিশোররা অপরাধের দিকে ধাবিত হয়। মাদকাসক্তি, চোরাচালান, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপেও যুক্ত হয়।
কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারসহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার থেকেই একটা শিশুর বেড়ে ওঠা। তাই সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু-কিশোরদের ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের উন্নত বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। বিদ্যালয়ে অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ করা জরুরি।
এখনও আমাদের দেশে পর্যাপ্ত শিশু-কিশোর সংশোধনী ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠেনি, যেখানে অপরাধী বা উচ্ছৃঙ্খল শিশু-কিশোরদের আচরণ সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসন করার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি বলা যায়, পরিবার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিশু-কিশোর আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কিশোর আদালতের সুসংগঠিত বিচার কার্যক্রম- প্রতিটি স্তরে সচেতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কিশোর অপরাধ সমাজ থেকে দূর হতে পারে।
প্রভাষক, কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, চাঁদপুর

আরও পড়ুন

×