যোগব্যায়াম: শরীর ও মনে
মডেল: স্বাগতা। ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
নাইস নূর
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২২ | ০৯:৩৬
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অবসাদ, ক্লান্তি, রোগ-শোক বাসা বাঁধে। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন চাপে মনেরও অসুখ হয়। শরীর ও মন সুস্থ রাখতে বেছে নিতে পারেন ইয়োগা বা যোগব্যায়াম। ফিটনেস সেন্টারে না গিয়ে নিয়মকানুন জেনে যোগব্যায়াম করতে পারেন ঘরে বসেই। এ বিষয়ে কথা বলেছেন রাজধানীর মিরপুরের নিউ ফেমাস জিমের ইয়োগা ট্রেইনার উম্মে কুলসুম এ্যানি।
তিনি বলেন, চারপাশের যে পরিস্থিতি তাতে রোগের বিরুদ্ধে লড়েই শক্তিশালী হতে হবে। নিয়মিত ইয়োগা তথা যোগব্যায়াম চর্চায় রোগব্যাধি কমে। ফুসফুসের কার্যক্রম বেড়ে যায়। যোগাসন হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করে, রক্তে সুগার কমায়, হূৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং পেশিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাত্ত্বিকভাবে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে যোগাসন।
ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ইয়োগা করার কোনো পার্থক্য নেই। খুব সহজ পদ্ধতিতে চার কিংবা পাঁচ বছর বয়স থেকেই ইয়োগা শুরু করা যায়। তবে দশ বছর থেকে সঠিক নিয়মে ইয়োগা করা সম্ভব। ইয়োগা শেষ করার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ৯৫ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে ইয়োগা করা যেতেই পারে।
সকাল ৮টার আগেই ইয়োগা করা উত্তম। এ সময় বাতাসে দূষণ কম ও আয়রনের পরিমাণ থাকে বেশি। শীতল আবহাওয়া মনকে রাখে প্রফুল্ল।
হাঁটাহাঁটি করা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা দরকার। এতে আমাদের হার্টের ব্যায়াম হয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে হার্ট থাকে সুস্থ।
স্কুয়াট জামস : এই ব্যায়ামটি করার সময় আপনাকে স্কুয়াট আকারে বসতে হবে এবং জাম্প দিতে হবে। এতে আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার ক্যালরিও কমে যাবে।
জাম্পিং জ্যাক : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন। তার পর হাত দুটি শরীরের পাশে রেখে লাফাবেন। হাত দুটি মাথার ওপর দিয়েও লাফানো যায়। জাম্পিং জ্যাক করার ফলে শরীরের হাড় শক্ত হয়। খুব সহজে কমে ওজন।
প্রাণায়াম : এক পা ভাঁজ করে অন্য পায়ের ওপর রেখে বসতে হবে। তার পর হাত দুটিকে মাঝ বরাবর রেখে এক হাত অন্য হাতের সঙ্গে লাগিয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। ব্যায়ামটি অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
বৃক্ষাসন : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান পা তুলে বাঁ পায়ের ঊরুতে রাখতে হবে। তার পর ধীরে ধীরে হাত ওপরে ওঠাতে হবে। বৃক্ষাসন নিয়মিত করলে দেহের ভারসাম্য বৃদ্ধি পায়। পায়ের ওপর জোর বাড়ে।
বীরভদ্রাসন : একটা পা সামনের দিকে হাঁটু গেড়ে অর্ধেক বসতে হবে। আরেকটা পা পেছন দিকে যত সম্ভব দিতে হবে। পরে হাত সামনের দিকে ভর দিয়ে রেখে শরীরটাকে সোজা অবস্থায় রাখতে হবে। ব্যায়ামটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভারসাম্য রক্ষা করে শরীরের গঠন করে সুন্দর।
গোমুখাসন : প্রথমে পা সোজা করে এক পা ভাঁজ করে অন্য পা তার ওপরে দিয়ে রাখতে হবে। পরে হাত দুটি পা দুটিকে ধরে রাখতে হবে। এতে বক্ষঃস্থল সুন্দর হয়। ভালো থাকে ফুসফুস। দূর করে অর্শের সমস্যা। নিদ্রাহীনতা দূর করে। মেরুদণ্ড সোজা ও সবল করে। দূর হয় পায়ের বাতব্যথাও।
প্ল্যাঙ্ক : কোমর ও মেরুদণ্ডের আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করে প্ল্যাঙ্ক। পিঠ ও কোমরের ব্যথা দূর করে। মেটাবোলিজমকে বাড়িয়ে তোলে।
বারফি : এই ব্যায়াম শরীরের পুরোটাই কাজে আসে। এটি করলে অন্য কোনো ব্যায়াম করতে কষ্ট কম হয়। শরীরে অনেক শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
হাই নিচ :ইনার থিংয়ের জন্য খুবই উপকারি এই ব্যায়াম। এ ছাড়া পেটের চর্বি কাটাতে উপকারী ভূমিকা পালন করে। ব্যায়ামটি করার সময় আপনার এক হাঁটু ভাঁজ করে পেটে চাপ দিয়ে আরেক হাঁটু ওঠাতে হবে। হালকা লাফিয়ে লাফিয়ে করতে হবে।
পুশ আপ : এই ব্যায়াম প্রথমে করতে অনেক কষ্ট হবে; কিন্তু তার পরও প্রতিদিন একটু একটু করে করতে হবে। শরীরের প্রতিটি মাংসপেশিকে সচল করে এটি। পুশ আপ করার জন্য প্রথমে হাতের তালু মেঝেতে রেখে বুক ধীরে ধীরে মেঝেতে রেখে শুয়ে পড়তে হবে। দুটি পা একসঙ্গে জোর করে সমান্তরালভাবে সোজা এবং মাথাও সোজা রাখতে হবে। এর পর তাকাতে হবে সামনের দিকে। এবার পায়ের আঙুলগুলো নিচের দিকে গোড়ালি ওপরে রেখে হাতে ভর দিয়ে এভাবে ধীরে ধীরে শরীরকে মাটি থেকে ওপরে ওঠাতে হবে। শরীর থাকবে একদম সোজা। পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখতে হবে। তার পর হাত সোজা করে ছাড়তে হবে নিঃশ্বাস। হাত ভাঁজ করে আবার মাটি ছুঁই ছুঁই করে নিচে নামতে হবে।
হলাসন : এই ব্যায়াম শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দীর্ঘ যৌবন লাভ করা যায়। মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখে। মাথাকে রাখে ঠান্ডা। প্রথমে শরীরটাকে সোজা করে শুয়ে পড়তে হবে। দুই পাশে রাখতে হবে হাত। হাতের তালু থাকবে মাটিতে। এবার হাতের ওপর ভর করে পা দুটি সংলগ্ন করে ধীরে ধীরে ওপর দিকে তুলে মাথার পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে পায়ের বুড়া আঙুল দিয়ে মাটি স্পর্শ করতে হবে। শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক। এভাবে প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে তিনবার অভ্যাস করতে হবে নিয়মিত।
সর্বাঙ্গাসন: এই আসন করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো হয়। নাক, কান ও গলার যে কোনো রকম অসুবিধার জন্য এই আসনের গুরুত্ব অনেক। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিডনির সমস্যার সমাধানের জন্য করতে পারেন এই আসন। প্রথমে চিত হয়ে শুতে হবে। তার পর দুই বাহু দুই পাশে রেখে পা দুটি জোড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে ওপরে তুলতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে, হাঁটু যেন না ভাঙে। পায়ের পাতা টান অবস্থায় ও দেহ সোজা থাকবে এবং থুতনি লেগে থাকবে বুকে। এরপর দুই কাঁধ ও বাহুতে ভর রেখে কনুই ভেঙে দুই হাত পিঠে দিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক। এই যোগব্যায়াম আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে করতে পারবেন, যা আপনার শরীরের জন্য হবে খুব উপকারী।
- বিষয় :
- যোগ ব্যায়াম