আঁখি সমাচার

ইলমা আজাদ
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:২০
তিনি মঞ্চে পা রাখলেই বেড়ে যায় দর্শক উল্লাস। কারণ দর্শকরা জানেন, আঁখি আলমগীর মঞ্চে থাকা মানেই অনিন্দ্য গায়কী দিয়ে তাঁদের হৃদয়ে ঝড় তুলবেন। বাস্তবেও সেই চিত্রই চোখে পড়ে। আঁখির অনিন্দ্য পরিবেশনায় প্রতিটি মুহূর্ত সংগীতপ্রেমীরা সুরের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন। উচ্ছ্বাস আর চাঞ্চল্যও দেখা যায় তাঁদের মাঝে। এক দিন দু'দিন নয়, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আঁখি এভাবে হৃদয় রাঙিয়ে যাচ্ছেন তাঁর অগণিত ভক্ত-শ্রোতার, যার সুবাদে পেয়েছেন 'স্টেজ কুইন' খেতাব। এই যে বছরের পর বছর একইভাবে সংগীতপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে চলেছেন, এর মন্ত্রটা কী? শুরুতেই আঁখির কাছে ছিল এই প্রশ্ন।
এর জবাবে তিনি বলেন, 'কাজের প্রতি সৎ থাকা এবং ভালো কিছু করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাওয়াই সাফল্যের মূলমন্ত্র। অন্তত আমি সেটিই মনে করি। তাই প্রতিশ্রুতি দিলে তা রাখার চেষ্টা করি সবসময়। এই যে তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছি, তারপরও একে একে সাতটি শো করেছি। ভীষণ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু কাউকে তা বুঝতে দিইনি। হাসিমুখে পারফর্ম করে গেছি। কেন এই কষ্ট মেনে নেওয়া জানেন? প্রতিশ্রুতি রক্ষা আর দর্শক-শ্রোতার জন্য। যাঁরা প্রতীক্ষায় ছিলেন আমার কণ্ঠে কিছু গান শোনার, তাঁদের নিরাশ করতে চাইনি বলেই কষ্ট উপেক্ষা করে মঞ্চে উঠেছি। এটা তো স্টেজের কথা।
গানের সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রকাশনা পর্যন্ত- প্রতিটি কাজে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। কোনো ফাঁকিবাজির মধ্যে আমি নেই। অর্থের মোহে পড়ে যে কোনো কাজ করার বিষয়েও আপত্তি আছে। জনপ্রিয়তা উপভোগ করি, কিন্তু তার জন্য প্রতিযোগিতার দৌড়ে অংশ নিই না। এই ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলেই হয়তো এখনও শ্রোতারা আমাকে ভালোবাসেন। আমার কাছে প্রত্যাশা করেন নতুন গানের। প্রতীক্ষায় থাকেন কবে মঞ্চে উঠে শোনাব তাঁদের প্রিয় গানগুলো।'
এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলোই বলে গেলেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। তাঁর এ কথা থেকে বোঝা যায়, কী কারণে শিল্পী হিসেবে শুরু থেকে এখনও সমান জনপ্রিয়। তারপরও অবাক হতে হয়, টিভি, বেতার, মঞ্চ থেকে শুরু করে অডিও মাধ্যম ও প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে একনাগাড়ে কাজ করে যাওয়া দেখে। এর বাইরেও আছে দেশ-বিদেশ সফর। গানের বাইরেও তাঁকে আমরা মডেল হিসেবে পেয়েছি। পেয়েছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেও। এই যে এখন টানা স্টেজ শো করে যাচ্ছেন, তার ফাঁকেই বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা ও অভিনেতা আলমগীরের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন।
আবার বাসায় ফিরে সন্তানদের দিকেও নজর রেখে চলেছেন। নিপুণভাবে গুছিয়ে রাখছেন ঘর-দুয়ার; দেখভাল করছেন সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম। এসব দেখে আঁখির কাছে জানাতে চাওয়া হয়েছিল, এত কিছু সামাল দিতে গিয়ে কখনও শরীর ও মনে ক্লান্তি ভর করে না? এর উত্তরে আঁখি হেসে বলেন, 'একদমই না। যত ব্যস্তই থাকি, কখনও নিজেকে ক্লান্ত মনে হয় না। কাজ না থাকলেই বরং মনে এক ধরনের শূন্যতা চেপে বসে। বাসায় থাকলেও কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। এ জন্যই আমার দুই মেয়ে আমাকে সুপারমাম বলে। ওদের চোখে সিনেমার সুপারহিরো-হিরোইনদের মতো আমি পাওয়ারফুল।
তাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা হয় না।' তাঁর মুখে এ কথা শুনে মানতেই হয়, কর্মের মধ্যেই মিশে আছে জীবনীশক্তি। তাই নতুন বছরেও অনেক কিছু তাঁর কাছে প্রত্যাশা করতে পারেন শ্রোতারা। আঁখির কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ বছর নতুন কী কাজের পরিকল্পনা করছেন? তিনি জানান, নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ বছর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি ভিন্ন স্বাদের গান প্রকাশের পরিকল্পনা করেছেন। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ও দ্বৈত গান গাইবেন। শিগগিরই সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের সুরে নতুন একটি গান প্রকযাশ পাবে। এর বাইরে স্টেজ শো, টিভি আয়োজনেও ধারাবাহিকভাবে অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে নতুন বছরটি গানে গানেই কাটবে তাঁর।
- বিষয় :
- আঁখি আলমগীর
- সংগীতপ্রেমী
- গায়িকা