বর্ণবাদ-বৈষম্যের ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ফ্রান্স

পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। চলছে বিক্ষোভকারীদের জ্বালাও পোড়াও। শনিবার রাজধানী প্যারিসের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মন্টারগিস শহরে একটি পোড়া বিল্ডিংয়ের সামনে উদ্ধারকর্মীরা - এএফপি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা দেশটির পুলিশ ও প্রশাসনের। চরম চাপের মুখে আছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন। বিভিন্ন সময় পুলিশের বৈষম্যের শিকার হওয়া তরুণ নারী-পুরুষই মূলত বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নাহেলের এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সে বর্ণবাদী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। খবর সিএনএন ও আলজাজিরার।
বিক্ষোভ দমাতে গত শুক্রবার সারাদেশে ৪৫ হাজার পুলিশ, বিশেষ ইউনিট, সাঁজোয়া যান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। তাতেও কাজ হয়নি। করণীয় ঠিক করতে শনিবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মাখোঁ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা জারি করা হবে কিনা এ নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে এখনই জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের এক মুখপাত্র। এই হত্যাকাণ্ডে জাতিগত বা বর্ণবাদী বিষয় ছিল না বলেও দাবি তাঁর।
সহিংসতার অভিযোগে এরই মধ্যে এক হাজার তিনশর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা দুই হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, বিভিন্ন সড়কের ২ হাজার ৫৬০টি স্থানে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৭৯ জন পুলিশ ও জেন্ডারমেজ। তবে সিএনএন বলছে, ৫২২ পুলিশ কর্মকর্তা ও জেন্ডারমেজ আহত হয়েছেন। সহিংসতা ও লুটপাট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ছেলে হত্যার জন্য একজনকে দায়ী করছেন নিহত কিশোরের মা। এদিকে, গতকাল নাহেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, হলুদ রঙের একটি প্রাইভেটকার চালিয়ে যাচ্ছিল কিশোর নাহেল। এ সময় তাকে দুই পুলিশ সদস্য থামান। এর মধ্যে এক পুলিশ বন্দুক তাক করে রাখেন কিশোর চালকের দিকে। হঠাৎ সে গাড়ি চালিয়ে যেতে চাইলে গুলি ছোড়েন তিনি। পরে কিছু দূরে গাড়িটি উল্টে যায়।
পুলিশের দাবি, তাদের এক সদস্যের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি থেকেই তাকে গুলি করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দুই পুলিশ সদস্য গাড়ির সামনে নয়, এক পাশে ছিলেন। এতে কোনো ঝুঁকি ছিল না। ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। চলছে তদন্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৫ সালের পর ফ্রান্সে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি। সে সময় পুলিশ কাছ থেকে পালিয়ে থাকা দুই কিশোরকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে প্রায় তিন সপ্তাহ চলে দাঙ্গা। সে সময় জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
চলতি বিক্ষোভে চরম চাপে পড়েছেন মাখোঁ। এ বছরের শুরুতে পেনশন আইন সংস্কার নিয়ে দেশজুড়ে চরম প্রতিবাদের মুখে পড়েন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে আরেক দফা থাকতে ১০০ দিনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন মাখোঁ। এই বিক্ষোভে তাঁর পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত বুধবার এক কনসার্টে যোগ দিয়ে তোপের মুখে পড়েন তিনি।