ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

সাক্ষাৎকার: ড. সেলিম জাহান

মানবসম্পদ উন্নয়ন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয়ে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়

মানবসম্পদ উন্নয়ন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয়ে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়

ড. সেলিম জাহান । ছবি - সমকাল

মাহফুজুর রহমান মানিক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪ | ১৪:০৫

অধ্যাপক ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালে অবসরে যান। ১৯৯২ সালে ইউএনডিপিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৭-৮২ সাল পর্যন্ত কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বরিশাল জিলা স্কুল ও বিএম কলেজে পড়াশোনা করেছেন। সেলিম জাহান ১৯৫১ সালের ২২ জানুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক শেখ রোকন ও জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।

সমকাল: আপনি ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সংস্থাটির মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে থাকে। এর কারণ কী? 

সেলিম জাহান: ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের গত বছরে অবস্থান ছিল ১৩৪, এ বছর ১২৯। এসব সূচক তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে– স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মাথাপিছু আয়। কিন্তু মানব উন্নয়ন ব্যাপক অর্থে বলে শুধু এই তিনটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। নাগরিক নিরাপত্তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারী-পুরুষের সমতাও জরুরি। ধরুন, মানব উন্নয়ন সূচকে একটি দেশ খুব ভালো করল। তার নাগরিক যদি নিরাপদে ঘুমাতে না পারে বা সেখানে নারী-পুরুষের সমতা নেই কিংবা পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে, নদী দখল হচ্ছে, তাহলে কিন্তু এ সূচকের মূল্য থাকছে না। এ সূচক দিয়ে আমরা মোটাদাগে একটা অবস্থান দেখছি। এ সূচক দিয়ে মানব উন্নয়নের নীতি তৈরি করা যাবে না।  

সমকাল: তাহলে সূচকের দরকারটা কী? 

সেলিম জাহান: সূচকের দরকার আছে। সারাবিশ্বে ১৮৯টি দেশের মধ্যে এ সূচক একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে কার অবস্থান কী। যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যাপার আছে। তারা পরস্পরের অবস্থান দেখবে। সুইডেন কিংবা নরওয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে, যেহেতু তারা ওপরের দিকে। অবস্থান নড়বড়ে হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংবাদপত্র প্রশ্ন করবে। পিছিয়ে পড়লে সরকারের জন্য চাপ তৈরি হয়; সেটি গুরুত্বপূর্ণ। 
সমকাল: মার্চে প্রকাশিত সুখ সূচক কিংবা জানুয়ারিতে প্রকাশিত দুর্নীতি সূচকের কথা বলি; কোনো সূচকেই বাংলাদেশের জন্য সুখবর নেই কেন?
সেলিম জাহান: আমি সূচক নিয়ে বেশি মাতামাতির পক্ষে নই। একে যদি আপনি গুরুত্ব দেন, এর কারণ অনুযায়ী যদি আপনি চলেন, হয়তো দেশ ওপরে উঠতে পারে আবার নিচেও যেতে পারে। সূচকের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এমন হতে পারে যে, বড় কোনো সমস্যা আমরা এড়িয়ে গেছি। তা ছাড়া সূচক হলো একটি আপেক্ষিক বিষয়। এখন ১৮৯টি দেশের মধ্যে সূচক হয়। আরও ২০টি বাড়লে আমাদের অবস্থান ১২৯ থেকে যেমন নামতে পারে, তেমনি উন্নতিও করতে পারে। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে বরং নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা উচিত। ব্যক্তিগত জীবনেও আমি এটা অনুসরণ করি। অমুকে কী করেছে, তা না দেখে বরং আমি গত বছর কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রতিযোগিতা আমার সঙ্গে। যেমন ১৯৭২ সালে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি, তা দেখতে হবে। নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান ছোট দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। আমরা গত ৫০ বছরে কোথায় গিয়েছি আর আগামী ৫০ বছরে কোথায় যেতে চাই, তা নির্ধারণ করা জরুরি। 

সমকাল: শিক্ষায় এনরোলমেন্ট ও অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু এখনও চার ভাগের এক ভাগ মানুষ নিরক্ষর। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? 
সেলিম জাহান: নিরক্ষরতার মধ্যে দুটি শ্রেণি। প্রথমত– যারা প্রাপ্তবয়স্ক, যেমন গ্রামের কৃষক বা যাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। এখন তাদের সাক্ষরতা নিশ্চিত করতে হলে নৈশ শিখন ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু সেই জায়গায় অতটা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার আছে কি? কারণ বয়স যাদের ৫০-৬০ বছর হয়ে গেছে, তাদের আপনি খুব বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি হয়তো সই করতে বা নাম লিখতে পারবেন কিন্তু তাদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া কঠিন। গুরুত্বটা দিতে হবে তাদের, যারা তরুণ বা কিশোর অথচ শিক্ষার পরিধির মধ্যে আসছে না। প্রাথমিক পর্যায়ে যারা ভর্তি হয়, অনেকে এখনও তা সমাপ্ত করতে পারে না। এর পেছনে পারিবারিক ও অর্থনৈতিক কারণ থাকতে পারে। তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়লে শিক্ষার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

সমকাল: সেটা কীভাবে?
সেলিম জাহান: তাদের জন্য একটি উপায় হতে পারে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা। যেটা একসময় ব্র্যাক করেছিল। তারা যেখানে কাজ করছে, তার পাশেই এমন ব্যবস্থা থাকা চাই। এভাবে গ্রামাঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া আমি মনে করি, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে, অধিকাংশেরই শিকড় এখনও গ্রামে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। তারা গ্রামে গ্রামে এক মাস বা দুই মাস সময় দিয়ে যারা নিরক্ষর আছে, তাদের সাক্ষরতা প্রদানের কাজ করতে পারে। এটা অনেক দেশ করছে এবং আমাদের জন্যও কার্যকর হতে পারে। এভাবে সবাইকে অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে। নিরক্ষর মানুষ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। পড়তে না পারলে সে অধিকারও ভোগ করতে পারবে না। তার কণ্ঠস্বর ব্যবহার করতে পারবে না। 

সমকাল: শিক্ষা খাতে আমাদের বরাদ্দ প্রত্যাশিত নয়…।
সেলিম জাহান: শিক্ষা খাতে আমাদের বরাদ্দ একেবারে কম। আবার এই বরাদ্দ কার শিক্ষায় যাচ্ছে, সেটাও বিষয়। শিক্ষা খাতের এই বরাদ্দ কি প্রাথমিক শিক্ষায় যাচ্ছে, নাকি অন্য স্তরে? আবার শহরে বেশি বরাদ্দ যাচ্ছে, নাকি গ্রামে? শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়ে কি আমরা দালানকোঠা বানাচ্ছি, নাকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে দিচ্ছি? এটা রাষ্ট্রের অধিকারের বিষয়। একটা বিষয় বলা দরকার, যেভাবে ঢালাওভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বানাচ্ছি, তার পেছনে উদ্দেশ্য কী? এখানে কি রাজনৈতিক কোনো বিষয় আছে? আমি শুনেছি, উত্তরায় ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমি সবসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিই। যেহেতু আমি জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছে। সেখানে রাজনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানবসম্পদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে শুধু ছাত্রদের কথা বললে হবে না; শিক্ষকদের কথাও বলতে হবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ হচ্ছে রাজনৈতিক ইচ্ছায়। যে কারণে আমরা মধ্যম মানের শিক্ষক পাচ্ছি। মধ্যম মানের শিক্ষক পাওয়া মানে মেধাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। কাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে ভোট পাব– এটা যদি বিবেচনা হয়, তাহলে শিক্ষক উন্নয়নে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার নেই বলতেই হবে। 

সমকাল: আমাদের যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে, তা মানবসম্পদে কতটা চুইয়ে পড়ছে?
সেলিম জাহান: দুই ধরনের অবকাঠামো আছে। একটা ভৌত অবকাঠামো, আরেকটা সামাজিক অবকাঠামো। ভৌত অবকাঠামো যেমন রাস্তাঘাট, ব্রিজ। সামাজিক অবকাঠামো যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য। ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল কতটা আমরা পাচ্ছি, তা মূল্যায়ন করতে সময় লাগবে। যেমন– পদ্মা সেতু হয়েছে। সবাই বলছে, বরিশাল যেতে সময় কম লাগছে। কিন্তু পদ্মা সেতু তৈরির ক্ষেত্রে যে বড় বিনিয়োগ হয়েছে, তার মূল্যায়ন করতে ৫-৭ বছর লাগবে। পদ্মা সেতু বাদ দিয়ে যে পথঘাটের উন্নয়ন হয়েছে– গ্রামের সঙ্গে বাজারের সংযোগ, উপজেলার সঙ্গে জেলার সংযোগ, সেগুলো কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। যেমন একটা সময় ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া মেয়েদের জন্য তেমন নিরাপদ ছিল না। মেয়েদের বিদ্যালয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো কিংবা নৌকা দিয়ে নদী পেরিয়ে যেতে হতো বা নদীর কারণেই তারা যেতে পারত না। এখন সেখানে রাস্তা হয়েছে। অন্যান্য যানবাহন দিয়ে সহজেই তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে। আবার একটা সময় ছিল যখন উত্তরবঙ্গ থেকে খুব বেশি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসত না। তারা রংপুরকেন্দ্রিক থাকত বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। এখন যমুনা সেতু হওয়ার পর এক উত্তরবঙ্গ থেকে আমরা প্রচুর শিক্ষার্থী পাচ্ছি। আবার ধরেন বিদ্যুৎ। এটাও অবকাঠামোর অংশ। বিদ্যুৎ পড়াশোনায় অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। 

সমকাল: আমাদের সামাজিক যে বৈষম্য, সেটা কীভাবে কমানো যায়?
সেলিম জাহান: রাস্তাঘাটে হাঁটলেই বৈষম্যের ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পারি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার হলেও সেখানে সবার সমান অধিকার নেই। বৈষম্য কমাতে আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নজর দিতে হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আমরা যদি বেশি শ্রমিক ব্যবহার করি, তাহলে শ্রমিকরা লাভবান হবে; তাদের কর্মসংস্থান বাড়বে। আর যদি যন্ত্র ব্যবহার করি তাহলে পুঁজির লাভ, কিন্তু শ্রমিকরা বঞ্চিত হবে। সে জন্য উৎপাদনে আমরা কোন জাতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করব, সেটা ঠিক করতে হবে। আমি মনে করি, মানবসম্পদ উন্নয়নে শ্রমিকের কথা চিন্তা করলে কিংবা বৈষম্য কমাতে চাইলে খুব বেশি যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। তা ছাড়া আমরা কোন জায়গায় বিনিয়োগ করব, তাও গুরুত্বপূর্ণ। সবাই বলি, আমরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই বিনিয়োগ যদি কৃষিতে ও গ্রামে হয়, তবে অর্থনীতিতে বৈষম্য কমে আসবে। অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য কমাতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিনিয়োগে যে বৈষম্য আছে, তা কমালে বৈষম্য কমবে। এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের মূল কেন্দ্র ঢাকা, চট্টগ্রাম। অন্যান্য জায়গায়ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তারপরও কিছু মানুষ থাকবে, যারা পিছিয়ে পড়া। যেমন প্রতিবন্ধী বা একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে বসবাস করে। তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ নারী-পুরুষের বৈষম্য, অঞ্চলের বৈষম্য কমানো, প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অসমতা দূর হতে পারে।

সমকাল: তরুণদের বেকারত্ব কতটা উদ্বেগজনক?
সেলিম জাহান: তরুণদের বেকারত্ব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তরুণদের একটা প্রাণশক্তি আছে। তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা আছে। তারা যদি এই সৃজনশীলতা ব্যবহার করার সুযোগ না পায়, তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। সামাজিক অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। তরুণদের কর্মসংস্থান বিষয়ে প্রথমে আমাদের দেখতে হবে শ্রমবাজারে তাদের জোগানটা কী? অর্থাৎ তাদের শিক্ষা। সে জন্য শিক্ষাটাকে চলমান বাজারের আলোকে সাজাতে হবে। এখন তরুণদের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চাইছে। কারণ সেখানে প্রচণ্ড ক্ষমতা আছে। যেখানে ক্ষমতা থাকে, সেখানে নানাভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে। আমরা দেখছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টায় লাইব্রেরিতে প্রবেশের জন্য লাইন ধরছে। বিসিএসে প্রস্তুতির জন্য। ফেসবুকে লিখছে– আমার প্রশাসন ক্যাডারে হয়েছে, আমার জন্য দোয়া করবেন। কিন্তু তরুণদের আমরা উদ্যোগমুখী করতে পারছি না। 

সমকাল: কিছু তরুণ উদ্যোক্তা হচ্ছে…।
সেলিম জাহান: তরুণ যারা উদ্যোক্তা হচ্ছে, তারা অধিকাংশই নিজ উদ্যোগে আসছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেভাবে তাদের জন্য প্রণোদনা নেই। এমনকি ঋণ নিতে গেলেই তাদের সংকটে পড়তে হচ্ছে। সে কারণেও অনেকে আগ্রহী হচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পের বিস্তৃতি ঘটছে। কিন্তু এখানে তরুণরা কি সেভাবে আসছে? অধিকাংশই দেখা যাচ্ছে, আমাদের মতো বয়সের কিংবা এর পরের প্রজন্মের।

তরুণদের প্রশাসনে ঢোকার চাইতে তারা যদি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে, তাহলে তাদের যে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার– ঋণ বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে হতে পারে, বাজার সৃষ্টির জন্য হতে পারে– এভাবে সহযোগিতা করতে হবে। আরেকটা কথা বলা দরকার। বাইরে যারা শ্রমিক হিসেবে যায়, অধিকাংশই তরুণ। কিন্তু তারা মূলত অদক্ষ শ্রমিক। এই অদক্ষ শ্রমিকদের যদি আমরা বাইরে পাঠাই, তবে তারা ভালো কাজ পাবে না। মন্ত্রণালয় যদি শুধু বিমানের টিকিট কেটে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে, তাহলে এমনটাই হবে। তাদের ভাষাগত ও অন্যান্য দক্ষতা নিশ্চিত করে পাঠাতে হবে। 

সমকাল: তরুণদের একটা সুযোগ আছে; ফ্রিল্যান্সিং। এ ক্ষেত্রে বাইরের বাজার ধরার জন্য করণীয় কী?
সেলিম জাহান: তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং বাজার ধরাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন ব্যক্তিগতভাবে কিংবা বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে কাজ পাচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ভারত ব্যাপকভাবে সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই। যুক্তরাষ্ট্রের একজন চিকিৎসক রোগী দেখার পর রোগীর কী কী অসুবিধা আছে, কী লাগবে ইত্যাদি রেকর্ড করেন। সেই রেকর্ড যখন ভারতে পাঠিয়ে দেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিকেল কিন্তু ভারতের সকাল। তারা সেটা ট্রান্সক্রিপ্ট করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর সেখানকার চিকিৎসকরা সকাল সকাল সেটা পেয়ে যাচ্ছেন। কল সেন্টারের সুযোগও সিঙ্গাপুর কিংবা ভারত পাচ্ছে। অথচ আমাদেরও ইংরেজি জানা মানুষ আছে। এসব কাজের ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলো সহায়তা করতে পারে।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সেলিম জাহান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন

×