
লেখকের সঙ্গে কমরেড গৌতম দাশ (ডান থেকে প্রথম)
আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। তাদের কাছে আমাদের ঋণ অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে আগরতলায় চীনপন্থিদের সাহায্য-সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন সদ্যপ্রয়াত সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ। সিপিএম নেতা কমরেড নৃপেন চক্রবর্তীর নির্দেশে তিনি আশ্রয়সহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা নিরলসভাবে করেছেন। আগরতলার মেলার মাঠে সিপিএম রাজ্য কমিটির অফিসে কয়েকবার তার সঙ্গে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনাকালে জেনেছিলাম, ঢাকার প্রেস ক্লাবে বোমার শেলে আহত সাংবাদিক ফয়েজ আহ্মদ আগরতলা পৌঁছে তারই আশ্রয়ে ছিলেন। তবে আঘাতের স্থানে পচন ধরলে গৌতম দাশ কালবিলম্ব না করে ফয়েজ আহ্মদকে গাড়ি করে ধর্মনগরে নিয়ে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। কলকাতায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ফয়েজ ভাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যুক্ত হন। সাংবাদিক কামাল লোহানীও আগরতলা গিয়ে গৌতম দাশের আশ্রয়ে থেকে পরে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। ভাসানীর অনুসারী যারা আগরতলায় গিয়েছিলেন, তাদের সবারই আশ্রয় জুটেছিল গৌতম দাশের প্রত্যক্ষ সহায়তায়।
কমরেড গৌতম দাশ আরও বলেছিলেন, ভারত সরকারের অনুরোধক্রমে সশস্ত্রপন্থিদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে সম্পূূর্ণ উচ্ছেদের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্থিতি ফিরে এসেছে। একমাত্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকার জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারত এখন শান্ত-স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সশস্ত্রপন্থিদের জন্য ভারত সরকারকে সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হতো। উত্তর-পূর্বে অজস্র সামরিক বাহিনীকে নিয়োজিত রাখতে এবং ঘাঁটি স্থাপন ছিল ব্যয়াধিক্য। সামরিক সেই ব্যয়াধিক্য থেকে ভারত রাষ্ট্রের মুক্তি ঘটেছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ভূমিকার জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ত্রিপুরার ভারী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কখনও সম্ভব হতো না বাংলাদেশের করিডোর সহায়তা ব্যতিরেকে। বাংলাদেশ সরকার নিঃশর্তে করিডোর দেওয়ার ফলে ওই বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশাল আকারের যন্ত্রগুলো ত্রিপুরায় আনা সম্ভব হয়েছে। ত্রিপুরার বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ত্রিপুরাবাসী চিরদিন স্মরণে রাখবে। করিডোর সুবিধার কারণে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যের যোগাযোগ, পণ্য পরিবহনসহ নানাবিধ সুবিধা লাভ সম্ভব হয়েছে।
বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের অংশীদার আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবাংলা, আসাম ও ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা তো পরের কথা, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন পশ্চিমবাংলা, আসামে তেমনি ত্রিপুরা রাজ্যে। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত ওই তিন রাজ্যে এখন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় এবং বামফ্রন্ট ও সিপিএমের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর ঢালাও নির্যাতন শুরু করে। ২০২৩ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় উপলব্ধি করেই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও জোট নির্মূলে আটঘাট বেঁধে নেমেছে, চরম ফ্যাসিবাদী কায়দায়।
এমন দুর্দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড গৌতম দাশের হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের যেমন ব্যথিত করেছে, তেমনি করেছে শোকাতুর।
কমরেড গৌতম দাশের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই ফোনালাপ হতো। হায়দার আকবর খান রনো ভাই করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি আমাকে তার শারীরিক অবস্থা প্রতিদিন জানানোর অনুরোধ করেন। রনো ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। হঠাৎ হায়দার আনোয়ার খান জুনো ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে সে সংবাদ জানানোর পর ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে তার নিত্যকার সংবাদ জানানোর অনুরোধ করেন। আমি তাকে জুনো ভায়ের শারীরিক অবনতি এবং মৃত্যু সংবাদ জানানোর পর ফোনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে যান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিকতায় তিনি আমার ফোনে জুনো ভায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। সেটা মাইকে শোনানো হয়।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ভায়ের ঘরের মেঝেতে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার সংবাদ জেনে তিনি কলকাতা থেকে অর্থোপেডিক সার্জন পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এদিকে রফিক ভায়ের অপারেশন করে কৃত্রিম হাড় সংযোজন চূড়ান্ত হয়েছে জানাই। রফিক ভাইকে ফোন করা যাবে কিনা; জিজ্ঞেস করলে আমি সম্মতি জানালে তিনি ফোনে রফিক ভায়ের সঙ্গে বেশ ক'দিন নিয়মিত কথা বলেন।
বর্তমানে ত্রিপুরাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বিজেপি। এই কঠিন দুঃসময়ে কমরেড গৌতম দাশের বড়ই প্রয়োজন ছিল। অথচ দল এবং রাজ্যবাসীর এই দুঃসময়ে তিনি নীরবে বিদায় নিলেন। তার এই চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারেনি। কমরেড গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং লাল সালাম।
নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
কমরেড গৌতম দাশ আরও বলেছিলেন, ভারত সরকারের অনুরোধক্রমে সশস্ত্রপন্থিদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে সম্পূূর্ণ উচ্ছেদের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্থিতি ফিরে এসেছে। একমাত্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকার জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারত এখন শান্ত-স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সশস্ত্রপন্থিদের জন্য ভারত সরকারকে সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হতো। উত্তর-পূর্বে অজস্র সামরিক বাহিনীকে নিয়োজিত রাখতে এবং ঘাঁটি স্থাপন ছিল ব্যয়াধিক্য। সামরিক সেই ব্যয়াধিক্য থেকে ভারত রাষ্ট্রের মুক্তি ঘটেছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ভূমিকার জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ত্রিপুরার ভারী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কখনও সম্ভব হতো না বাংলাদেশের করিডোর সহায়তা ব্যতিরেকে। বাংলাদেশ সরকার নিঃশর্তে করিডোর দেওয়ার ফলে ওই বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশাল আকারের যন্ত্রগুলো ত্রিপুরায় আনা সম্ভব হয়েছে। ত্রিপুরার বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ত্রিপুরাবাসী চিরদিন স্মরণে রাখবে। করিডোর সুবিধার কারণে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যের যোগাযোগ, পণ্য পরিবহনসহ নানাবিধ সুবিধা লাভ সম্ভব হয়েছে।
বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের অংশীদার আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবাংলা, আসাম ও ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা তো পরের কথা, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন পশ্চিমবাংলা, আসামে তেমনি ত্রিপুরা রাজ্যে। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত ওই তিন রাজ্যে এখন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় এবং বামফ্রন্ট ও সিপিএমের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর ঢালাও নির্যাতন শুরু করে। ২০২৩ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় উপলব্ধি করেই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও জোট নির্মূলে আটঘাট বেঁধে নেমেছে, চরম ফ্যাসিবাদী কায়দায়।
এমন দুর্দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড গৌতম দাশের হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের যেমন ব্যথিত করেছে, তেমনি করেছে শোকাতুর।
কমরেড গৌতম দাশের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই ফোনালাপ হতো। হায়দার আকবর খান রনো ভাই করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি আমাকে তার শারীরিক অবস্থা প্রতিদিন জানানোর অনুরোধ করেন। রনো ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। হঠাৎ হায়দার আনোয়ার খান জুনো ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে সে সংবাদ জানানোর পর ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে তার নিত্যকার সংবাদ জানানোর অনুরোধ করেন। আমি তাকে জুনো ভায়ের শারীরিক অবনতি এবং মৃত্যু সংবাদ জানানোর পর ফোনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে যান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিকতায় তিনি আমার ফোনে জুনো ভায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। সেটা মাইকে শোনানো হয়।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ভায়ের ঘরের মেঝেতে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার সংবাদ জেনে তিনি কলকাতা থেকে অর্থোপেডিক সার্জন পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এদিকে রফিক ভায়ের অপারেশন করে কৃত্রিম হাড় সংযোজন চূড়ান্ত হয়েছে জানাই। রফিক ভাইকে ফোন করা যাবে কিনা; জিজ্ঞেস করলে আমি সম্মতি জানালে তিনি ফোনে রফিক ভায়ের সঙ্গে বেশ ক'দিন নিয়মিত কথা বলেন।
বর্তমানে ত্রিপুরাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বিজেপি। এই কঠিন দুঃসময়ে কমরেড গৌতম দাশের বড়ই প্রয়োজন ছিল। অথচ দল এবং রাজ্যবাসীর এই দুঃসময়ে তিনি নীরবে বিদায় নিলেন। তার এই চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারেনি। কমরেড গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং লাল সালাম।
নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
মন্তব্য করুন