যুব দক্ষতা দিবস
দক্ষ ও সুস্থ তারুণ্যই জাতির ভবিষ্যৎ
মো. মোফাক খারুল ইসলাম ও সুপ্রিয়া সরকার
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২ | ০৪:৩১
প্রতিবারের মতো এবারও আমরা 'বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস' উদযাপন করতে যাচ্ছি। এবারের প্রতিপাদ্য- 'ভবিষ্যতের জন্য যুব দক্ষতার রূপান্তর'। ২০১৪ সালে জাতিসংঘের ঘোষণার পর থেকে প্রতি বছর ১৫ জুলাই 'বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে কভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্বন্দ্ব, অসীম দারিদ্র্য, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কারণে সাধারণ মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটানোর যে নিয়ত চেষ্টা, তা মাথায় রেখে। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, 'কর্মসংস্থান, সম্মানজনক কাজ এবং উদ্যোক্তাদের দক্ষতার সঙ্গে তরুণ-যুবাদের প্রস্তুত করার জন্য দিবসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে 'কমিউনিটি পার্টনারশিপ টু স্ট্রেংদেন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (কম্পাস)' প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনাইটেড স্টেটস ফরেস্ট সার্ভিস বা ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামস ও ইউএসএআইডি ইয়ুথ কনজারভেশন কোর (ওয়াইসিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রোগ্রামটি ছয় মাসের লম্বা একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া যুবক-যুবতীদের কর্মমুখী শিক্ষা, সফট স্কিলসে দক্ষ করে তুলে কর্মসংস্থানের উপযোগী এবং নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে; সঙ্গে তাঁদের পরিবেশের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গড়ে তুলছে।
প্রোগ্রামটি মূলত ইউএস-ওয়াইসিসিকে অনুসরণ করে বিভিন্ন দেশ যেমন হন্ডুরাস, কলম্বিয়া ও কম্বোডিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রোগ্রামটির প্রাসঙ্গিকতা বেশ কয়েক বছর ধরে চলা কার্যাবলি যেমন ভার্চুয়াল শিক্ষা সফর, স্থানীয় পরামর্শ কর্মশালা, যুব ও শ্রমবাজার বিশ্নেষণের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছিল। এই তরুণদের জানার পরিধি, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাপন পদ্ধতি, কর্মজীবন, তাঁদের দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি, টেকসই অর্থ উপার্জনক্ষম পন্থা, দৈনন্দিন বাধার সঙ্গে কভিড-১৯-এর প্রভাব এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায়গুলো বোঝার জন্য (ইয়ুথ অ্যান্ড লেবার মার্কেট) স্টাডি পরিচালিত হয়েছিল।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৯৪ জন চাকরিবিহীন
তরুণের মধ্যে মাত্র ৫১ জন (১৭ শতাংশ) প্রশিক্ষণ পেয়েছেন; ২৪৩ জন (৮৩ শতাংশ) কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। এটি প্রশিক্ষণের প্রাপ্যতা বা প্রশিক্ষণে সচেতনতার অভাব প্রদর্শন করে এবং সরকারি উদ্যোগ ও এনজিওর অনুপস্থিতি নির্দেশ করে। এটি আরও ব্যাখ্যা করে, তরুণদের একটি বড় অংশ (৮৩ শতাংশ) বেকার। কারণ তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
এ ছাড়া ২৭৯ জন অংশগ্রহণকারী (৯৫ শতাংশ) নিজেদের জন্য আরও ভালো সুযোগ খুঁজতে আগ্রহী। ১২ জন (৪ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা আগ্রহী নন এবং তিনজন (১ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এটি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আরও ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার আশায় নতুন কিছু শেখার জন্য তরুণদের আগ্রহ ও উৎসাহকে নির্দেশ করে। তবে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবন্ধকতার মধ্যে একটি হলো, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে অনেক লোক ব্যবসার ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য দক্ষতার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নন।
লক্ষণীয় আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো, তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সমর্থন না দেওয়া হলে তাঁদের অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়। আমরা দেখেছি, যাঁরা আমাদের প্রকল্পে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা পরে কর্মসংস্থানের সন্ধানে এগিয়ে যাননি। অতএব, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াইসিসি একটি অ্যালামনাই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা ফলোআপের সুবিধা দেয় এবং স্বেচ্ছায় কর্মসংস্থানের সংযোগ সহায়তা প্রদান করে।
আমাদের সমাজে যেভাবে লিঙ্গ সামাজিকভাবে নির্মিত হয়েছে, তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই আইজিএতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। আমরা দেখছি, নার্সারি প্রশিক্ষণ শেষ করার পরও নারী গ্র্যাজুয়েটরা তাঁদের লিঙ্গগত পরিচয়ের কারণে একটি নার্সারি শুরু করার জন্য পারিবারিক সমর্থন পাননি। এ সমস্যার সমাধান করার জন্য ওয়াইসিসি শুরুতে অভিভাবকদের যুক্ত করে, যখন নির্বাচিত প্রশিক্ষণার্থীরা তাঁদের বৃত্তিমূলক ট্রেড/বিষয় বেছে নেন।
মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন ও সাপ্লাই চেইন-সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে সংযোগ সমীক্ষায় দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৫৯ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুদের ওপর নির্ভর করে, যখন ১৫ শতাংশ তাঁদের ব্যবসা শুরু করার জন্য ব্যক্তিগত পুঁজির ওপর নির্ভরশীল। এটি প্রকাশ করে, ব্যক্তিগত পুঁজি/নগদ অর্থ জমা করতে সময় লাগে এবং পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া কোনো বিকল্প নয়। দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি যুবকদের স্থানীয় এমএফআইর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে, যাতে ঋণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে গ্রাহকের অভাবে অনেক উদ্যোক্তা বাধার সম্মুখীন হন। সংস্থাগুলো স্থানীয় রেস্তোরাঁ বা দোকানগুলো এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে এ লিংকেজগুলো সহায়তা করতে পারে।
অন্যান্য দেশের মতো কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশের তরুণদের একটি কঠিন সময় গেছে। এই মহামারি-পরবর্তী সময়ে চাকরির বাজারে তাঁদের উপস্থিতি জোরদার করতে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হওয়া উচিত। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইজিএ ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন করা সরকারি ও বেসরকারি খাতের একটি কৌশল হতে পারে। সর্বোপরি, একজন সুস্থ ও দক্ষ তরুণই একটি জাতি ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ।
মো. মোফাক খারুল ইসলাম, ওয়াইসিসি স্পেশালিস্ট, ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ও সুপ্রিয়া সরকার, ওয়াইসিসি অ্যাসোসিয়েট, ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম