ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়

সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তর শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বড় সুযোগও

সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তর শুধু  প্রয়োজনীয় নয়, বড় সুযোগও

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:০৭

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই বাংলাদেশের জন্য সার্কুলার ইকোনমি মডেল গ্রহণ করা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, এটি একটি বড় সুযোগও বটে। দ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দূষণ এবং সম্পদ কমে যাওয়ার মতো পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তর এই সমস্যাগুলোর সমাধান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। সম্প্রতি ত্রৈমাসিক বুলেটিনটি প্রকাশিত হয়। আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ২০২৩ সালে এশিয়া ছিল আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল; যেখানে বন্যা ও ঝড়জনিত ঘটনা হতাহত এবং আর্থিক ক্ষতির প্রধান একটি কারণ ছিল। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় তাপপ্রবাহের প্রভাব আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, যেখানে হিমবাহ গলে পড়ার কারণে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ু বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় উন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো  হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার সমন্বিত জলবায়ু কার্যক্রমে অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে ইন্টারগভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েশন কমিটির (আইএনসি ৫) অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্লাস্টিকদূষণ মোকাবিলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতার চুক্তি করতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ১৭৯টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেন যে, সব অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন এবং আলোচনার জন্য কমিটির ফের অধিবেশনের প্রয়োজন।
আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, একদিকে পরিবেশগত ক্ষয় এবং সম্পদের সংকট যখন বৈশ্বিক আলোচনার শীর্ষে, তখন সার্কুলার ইকোনমি এক নতুন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। প্রথাগত রৈখিক অর্থনীতি যেখানে ‘নাও-তৈরি করো-ফেলে দাও’ মডেলে পরিচালিত হয়, সেখানে সার্কুলার ইকোনমিতে টেকসই, দক্ষতা এবং সম্পদ পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। এটি পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার এবং ফেলে দেওয়ার পদ্ধতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।
এতে বলা হয়, সার্কুলার ইকোনমি তিনটি প্রধান নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এগুলো হচ্ছে– বর্জ্য ও দূষণ দূর করা, পণ্য ও উপকরণ ব্যবহারে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা। এ নীতিগুলো পণ্যের জীবনচক্র বাড়ানো, উপকরণের পুনর্ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং বর্জ্য কমাতে কাজ করে। এর ফলে সম্পদ সংরক্ষণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, দূষণ মোকাবিলা এবং নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। কিছু উন্নত দেশ ইতোমধ্যে সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনা দেখাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। নেদারল্যান্ডস ২০৩০ সালের মধ্যে কাঁচামাল ব্যবহারের অর্ধেক কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সুইডেন গৃহস্থালির ৯৯ শতাংশ বর্জ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। টেকসই ফ্যাশনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কাপড়ের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং পুরোনো পোশাকের বাজার প্রচারের মাধ্যমে শিল্পটি পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে পারে। কৃষি বর্জ্য যেমন– ধানের তুষ ও পাটের উপজাত, জৈবশক্তি ও জৈব সারের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা টেকসই চাষাবাদে সহায়তা করবে। বৃত্তাকার মডেল বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যে সহায়ক হতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মাত্র ৩০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও কৃষি বর্জ্যের অনিয়মিত ফেলা পরিবেশের ক্ষতি আরও বাড়ায়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো এবং বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো কমাতে পারবে এবং অর্থনৈতিক সুবিধাও অর্জন করতে পারবে। পোশাকশিল্পে এখন সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে বাংলাদেশে। এখানকার অনেক কারখানা টেকসই চর্চার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে, যা সারাবিশ্বের বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের জন্য অনন্য নজির।

আরও পড়ুন

×