ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

আলোচনার পক্ষে সবাই, ছাড় দেবে না কেউ

এখনকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লুটপাট ভাগবাটোয়ারা নিয়ে

এখনকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লুটপাট ভাগবাটোয়ারা নিয়ে

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩০ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩০

বর্তমানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দুই ধরনের। একটি হচ্ছে, লুটপাট ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। আমার বিবেচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বের শুরু এখান থেকেই। আরেকটি দ্বন্দ্ব হচ্ছে, ৯৯ শতাংশ জনসাধারণ বনাম ১ শতাংশ লুটেরা শ্রেণি। সেই দ্বন্দ্বটা পেছনে পড়ে গেছে, সামনে আনতে হবে। এটিকে সামনে না আনলে গণতন্ত্রের সমস্যার সমাধান হবে না।

তত্ত্বাবধায়ক ও তদারকি সরকার– দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য নেই। আসন্ন নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়; কিন্তু গ্রহণযোগ্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে যথেষ্ট নয়। সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে লাগবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, টাকার খেলা, পেশিশক্তির ব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনকে ব্যবহার বন্ধ করা। একটি শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শতভাগ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে চলমান রাজনৈতিক সংকট বলা হচ্ছে। এটি চলমান রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংকট। আর এটি হলো বুর্জোয়া রাজনীতির সংকট। এটি একটি বহুমাত্রিক সংকট, প্রধানত অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক, আদর্শিক ক্ষেত্রে সংকট।

আইয়ুব আমল থেকে রাজপথে রয়েছি। সে সময়ে আমাদের ভোটাধিকার দেয়নি। গণঅভ্যুত্থান করে ’৭০-এর নির্বাচন আদায় করতে হলো। নির্বাচনের রায় কার্যকর করতে দিল না। যার ফলে অস্ত্র তুলে নিয়ে আমাদের ভোটের রায়কে কার্যকর করতে হলো। এরপর ভেবেছিলাম ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের আর চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা হোঁচট খাওয়া শুরু করলাম।

এরপর এরশাদের পতনের পর ভাবলাম, এখন আর এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু আজও এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। আর এটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট উপস্থিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন বলে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। বিএনপি যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন তারা বলে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ দুটি দল যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন মানুষের ভালোমন্দের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। শুধু এটি দিয়েই প্রমাণিত হয়, এটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এটি স্বীকার করে না। কারণ উন্নয়ন করতে হবে। এরপর বলে উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এর পরই গোলমালটি করে দেয়। এরপর বলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার।

এ কথার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে– একটি দলকে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে হবে। এখানে ধারাবাহিকতা লাগবে প্রতিষ্ঠানের। লাগবে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে ৭১ সালে অর্জন করা নীতির ধারাবাহিকতা। কিন্তু তা না করে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এমন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। যার ফল হলো– স্থিতিশীলতা তো থাকলই না, বরং অস্থিতিশীলতা বেড়ে গেল। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই যা ইচ্ছা তা করা যাবে না। সংসদ সংবিধান তৈরি করেছে, সংবিধান সংসদ তৈরি করেনি। সুতরাং, যে সংবিধানের ভিত্তিতে আমরা স্বাধীনতার পর যাত্রা শুরু করেছিলাম, তার মৌলিক বিধানগুলো অক্ষুণ্ন রেখেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নেই; কিন্তু সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে।

বিএনপিও আজিজ সাহেবকে সিইসি, ভুয়া ভোটার তালিকা, বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল। তবে সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ দু’বার এসব করে সফল হয়েছে। তবে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আওয়ামী লীগ যেন তৃতীয়বার সফল না হয়।

আরও পড়ুন

×