চিন্তাবীজ
'মওলানা ভাসানীর রচনা' থেকে

--
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১ | ১২:০০
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার জীবন-সায়াহ্নে বিকারগ্রস্ত পাশ্চাত্য সভ্যতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে প্রাচ্যের দিকে তাকিয়ে এই গভীর আশা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন যে, দুর্যোগের মেঘমুক্ত আকাশে মানব ইতিহাসের একটি সুনির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো শুরু হবে পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্তে। জনগণতান্ত্রিক চীনকে যতই দেখেছি, ততই আমার মনে এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে যে, প্রাচ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ যে দেশে বাস করে, সেই দেশকে ঘিরেই এই মহৎ আশা সফল হতে চলেছে।
চীনকে যদি বলা যায় এক জাদুর দেশ, তাহলে বলতে হবে চীনের এই জাদু হচ্ছে আত্মনির্ভরতার জাদু। 'বিরাট অগ্রগমন' কর্মসূচি এবং কমিউন গঠন পরিকল্পনা- গণচীনের অর্থনীতি ক্ষেত্রে এ দুটো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যমগুলো শোচনীয় ব্যর্থতার কাহিনিই শুধু প্রচার করেছে। তারা এই সভ্য দুনিয়ার মানুষকে যা জানতে দিতে চায়নি তা এই যে, ১৯৫৮-৬০-এর 'বিরাট অগ্রগমনে'র এই তিন বছরের প্রথম ছয় কোটি মানুষ ঘরে তৈরি চুল্লিতে ইস্পাত তৈরি করতে শিখেছে। এর ফলে কমিউনগুলো নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী কারখানা নিজেরাই গড়ে তুলতে পেরেছে। এর ফলে চীনের প্রত্যেক কাউন্টির কোথায় পাওয়া যাবে কয়লা এবং লৌহ আকড়। এরই ফলে কমিউনগুলো নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী কারখানা নিজেরাই গড়ে তুলতে পেরেছে। 'বিরাট অগ্রগমনে'র কর্মসূচিরই এটা একটা ফলশ্রুতি। ওই বছরই শীতকালে সাড়ে সাত কোটি মানুষ সেচ-ব্যবস্থা ও পানি সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিল। আর এরই ফলে সম্ভব হয়েছিল ১৯৫৯ সালে ফসলের মৌসুম থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শরৎকাল পর্যন্ত কঠোর পরীক্ষার বছরগুলো সাহসের সঙ্গে পাড়ি দেওয়া।
'বিরাট অগ্রগমনের কর্মসূচি'র ফলে চীনের ইস্পাত উৎপাদন ১৯৫৭ সালের বাইশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টন থেকে বেড়ে ১৯৬০ সালে তেপান্ন লাখ পঞ্চাশ হাজার টনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ওই একই বছরে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর খরা, বন্যা এবং ঝড়ে চীনের আবাদি এলাকার প্রায় ৬০ ভাগকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আঘাত সামলাতে হয়েছিল। শস্যের নিদারুণ অভাব দেখা দিয়েছিল ১৯৬০-৬১-এর শীতকালে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আর একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তখন পর্যন্ত চীনের বৈদেশিক সাহায্যের একমাত্র উৎস সোভিয়েত ইউনিয়ন চীন থেকে সমস্ত সোভিয়েত বিশেষজ্ঞ প্রত্যাহার করতে শুরু করেছিল এবং যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতির খুচরা অংশ ও আন্তঃকারখানা সরবরাহ সম্পর্কে চীনের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের যত চুক্তি ছিল, সবই সোভিয়েত ইউনিয়ন বাতিল করেছিল। এ জন্য চীনকে বিরাট সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর কিছু সুফলও ফলেছিল। তার একটি হচ্ছে এই যে, চীন আরও বেশি করে স্বনির্ভরতার নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। সোভিয়েত বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে চীনকে দ্রুত কারিগরি জ্ঞান অর্জন করার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হয়েছিল। আর সেইসঙ্গে কারিগরি জ্ঞানকে চীনের অবস্থার উপযোগী করে কাজে লাগানোর ব্যাপারে চীন এক নতুন সাধনা শুরু করেছিল। এই সাধনার ক্ষেত্রে চীনের অভূতপূর্ব সাফল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বে তুলনাবিহীন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সোভিয়েত সাহায্য প্রত্যাহারের ফলে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে গণকমিউনগুলোই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। কমিউনগুলো যৌথ উদ্যোগ ও সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। অপেক্ষাকৃত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী কমিউনগুলো পার্শ্ববর্তী কমিউনগুলোকে সমান বিনিময়ের ভিত্তিতে, অর্থাৎ শস্যের বিনিময়ে শস্য, শ্রমের বিনিময়ে শ্রম- এই ভিত্তিতে ট্রাক্টর, চাষের পশু এবং শ্রম দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। কমিউন সংগঠনের এই অন্তর্নিহিত শক্তিই চরম দুর্যোগ মোকাবিলার সাহস ও প্রত্যয় জুগিয়েছিল।
আমাদের এত যেসব দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষের অভিশাপ থেকে আজও মুক্তি পায়নি, খরা এবং বন্যাকে চীনের হাজার হাজার গ্রামীণ জনতাকে পিতৃপিতামহের ভিটা ত্যাগ করে কাঙালের এত শহরের রাস্তায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য করে, গণচীনের কমিউন ব্যবস্থা ও তার অসাধারণ সাফল্য থেকে তাদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে। চীনের মানুষ বিশ্বাস করে, কমিউন সংগঠন হচ্ছে একেবারে নিচের স্তর থেকে কৃষি, শিল্প এবং রাষ্ট্রক্ষমতার সমন্বয়। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সমাজতন্ত্রের স্তর পেরিয়ে সাম্যবাদের স্তরে পৌঁছানো যাবে।
কৃষি পুনর্গঠন এবং শিল্পবিকাশের ক্ষেত্রে চীন এক বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ নির্ধারণ করে, শিল্প বিশেষ করে ভারী শিল্পই পরিবর্তনের প্রকৃতি এবং গতি নির্ধারণ করে, শিল্প ও কৃষিব্যবস্থার মধ্যেও আনে রূপান্তর। আবার কৃষিই হচ্ছে শিল্পের ভিত্তি। কৃষি পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প গঠনের ক্ষেত্রে গণচীন যে নীতি অনুসরণ করে চলেছে, তা সুষ্ঠু সমন্বয়ের নীতি। চীন যেমন এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, শিল্পোৎপাদনের কতগুলো ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশলের ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য, তেমনি উৎপাদনের প্রাচীন পদ্ধতিগুলোকেও চীন কাজে লাগিয়েছে। শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক ও প্রাচীন পদ্ধতির এই চমৎকার সমন্বয় চীনের সাফল্যের একটা প্রধান কারণ। কৃষি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার চেয়েও বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে গ্রামীণ জনতার সীমাহীন দারিদ্র্য। কমিউন ব্যবস্থার মাধ্যমে চীন এই দারিদ্র্যকে চিরদিনের জন্য নির্মূল করেছে। কমিউন ব্যবস্থা চীনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
কমিউন ব্যবস্থা চীনের পারিবারিক বন্ধনকে তছনছ করে দিয়েছে- এই প্রচারও মিথ্যা। কমিউন ব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল তো করেইনি, বরং ব্যক্তির ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্নেহ-প্রীতির বন্ধনকে আরও শক্তিশালী এবং প্রত্যেক পরিবারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও সচেতন করে তুলেছে। স্নেহ-প্রীতির বন্ধন এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা পরিবারগুলোকে অধিকতর কর্মক্ষম ইউনিটে রূপান্তরিত করেছে।
চীনের কমিউন ব্যবস্থা হচ্ছে এক নতুন ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রশাসনিক সংগঠন, যা চীনের গোটা গ্রামীণ সমাজে এনেছে এক বৈপ্লবিক রূপান্তর।
'মওলানা ভাসানীর রচনা'
সম্পাদনা: খান মাহবুব
পলল প্রকাশনী, ২০১৬
চীনকে যদি বলা যায় এক জাদুর দেশ, তাহলে বলতে হবে চীনের এই জাদু হচ্ছে আত্মনির্ভরতার জাদু। 'বিরাট অগ্রগমন' কর্মসূচি এবং কমিউন গঠন পরিকল্পনা- গণচীনের অর্থনীতি ক্ষেত্রে এ দুটো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যমগুলো শোচনীয় ব্যর্থতার কাহিনিই শুধু প্রচার করেছে। তারা এই সভ্য দুনিয়ার মানুষকে যা জানতে দিতে চায়নি তা এই যে, ১৯৫৮-৬০-এর 'বিরাট অগ্রগমনে'র এই তিন বছরের প্রথম ছয় কোটি মানুষ ঘরে তৈরি চুল্লিতে ইস্পাত তৈরি করতে শিখেছে। এর ফলে কমিউনগুলো নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী কারখানা নিজেরাই গড়ে তুলতে পেরেছে। এর ফলে চীনের প্রত্যেক কাউন্টির কোথায় পাওয়া যাবে কয়লা এবং লৌহ আকড়। এরই ফলে কমিউনগুলো নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী কারখানা নিজেরাই গড়ে তুলতে পেরেছে। 'বিরাট অগ্রগমনে'র কর্মসূচিরই এটা একটা ফলশ্রুতি। ওই বছরই শীতকালে সাড়ে সাত কোটি মানুষ সেচ-ব্যবস্থা ও পানি সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিল। আর এরই ফলে সম্ভব হয়েছিল ১৯৫৯ সালে ফসলের মৌসুম থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শরৎকাল পর্যন্ত কঠোর পরীক্ষার বছরগুলো সাহসের সঙ্গে পাড়ি দেওয়া।
'বিরাট অগ্রগমনের কর্মসূচি'র ফলে চীনের ইস্পাত উৎপাদন ১৯৫৭ সালের বাইশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টন থেকে বেড়ে ১৯৬০ সালে তেপান্ন লাখ পঞ্চাশ হাজার টনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ওই একই বছরে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর খরা, বন্যা এবং ঝড়ে চীনের আবাদি এলাকার প্রায় ৬০ ভাগকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আঘাত সামলাতে হয়েছিল। শস্যের নিদারুণ অভাব দেখা দিয়েছিল ১৯৬০-৬১-এর শীতকালে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আর একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তখন পর্যন্ত চীনের বৈদেশিক সাহায্যের একমাত্র উৎস সোভিয়েত ইউনিয়ন চীন থেকে সমস্ত সোভিয়েত বিশেষজ্ঞ প্রত্যাহার করতে শুরু করেছিল এবং যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতির খুচরা অংশ ও আন্তঃকারখানা সরবরাহ সম্পর্কে চীনের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের যত চুক্তি ছিল, সবই সোভিয়েত ইউনিয়ন বাতিল করেছিল। এ জন্য চীনকে বিরাট সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর কিছু সুফলও ফলেছিল। তার একটি হচ্ছে এই যে, চীন আরও বেশি করে স্বনির্ভরতার নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। সোভিয়েত বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে চীনকে দ্রুত কারিগরি জ্ঞান অর্জন করার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হয়েছিল। আর সেইসঙ্গে কারিগরি জ্ঞানকে চীনের অবস্থার উপযোগী করে কাজে লাগানোর ব্যাপারে চীন এক নতুন সাধনা শুরু করেছিল। এই সাধনার ক্ষেত্রে চীনের অভূতপূর্ব সাফল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বে তুলনাবিহীন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সোভিয়েত সাহায্য প্রত্যাহারের ফলে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে গণকমিউনগুলোই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। কমিউনগুলো যৌথ উদ্যোগ ও সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। অপেক্ষাকৃত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী কমিউনগুলো পার্শ্ববর্তী কমিউনগুলোকে সমান বিনিময়ের ভিত্তিতে, অর্থাৎ শস্যের বিনিময়ে শস্য, শ্রমের বিনিময়ে শ্রম- এই ভিত্তিতে ট্রাক্টর, চাষের পশু এবং শ্রম দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। কমিউন সংগঠনের এই অন্তর্নিহিত শক্তিই চরম দুর্যোগ মোকাবিলার সাহস ও প্রত্যয় জুগিয়েছিল।
আমাদের এত যেসব দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষের অভিশাপ থেকে আজও মুক্তি পায়নি, খরা এবং বন্যাকে চীনের হাজার হাজার গ্রামীণ জনতাকে পিতৃপিতামহের ভিটা ত্যাগ করে কাঙালের এত শহরের রাস্তায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য করে, গণচীনের কমিউন ব্যবস্থা ও তার অসাধারণ সাফল্য থেকে তাদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে। চীনের মানুষ বিশ্বাস করে, কমিউন সংগঠন হচ্ছে একেবারে নিচের স্তর থেকে কৃষি, শিল্প এবং রাষ্ট্রক্ষমতার সমন্বয়। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সমাজতন্ত্রের স্তর পেরিয়ে সাম্যবাদের স্তরে পৌঁছানো যাবে।
কৃষি পুনর্গঠন এবং শিল্পবিকাশের ক্ষেত্রে চীন এক বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ নির্ধারণ করে, শিল্প বিশেষ করে ভারী শিল্পই পরিবর্তনের প্রকৃতি এবং গতি নির্ধারণ করে, শিল্প ও কৃষিব্যবস্থার মধ্যেও আনে রূপান্তর। আবার কৃষিই হচ্ছে শিল্পের ভিত্তি। কৃষি পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প গঠনের ক্ষেত্রে গণচীন যে নীতি অনুসরণ করে চলেছে, তা সুষ্ঠু সমন্বয়ের নীতি। চীন যেমন এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, শিল্পোৎপাদনের কতগুলো ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশলের ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য, তেমনি উৎপাদনের প্রাচীন পদ্ধতিগুলোকেও চীন কাজে লাগিয়েছে। শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক ও প্রাচীন পদ্ধতির এই চমৎকার সমন্বয় চীনের সাফল্যের একটা প্রধান কারণ। কৃষি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার চেয়েও বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে গ্রামীণ জনতার সীমাহীন দারিদ্র্য। কমিউন ব্যবস্থার মাধ্যমে চীন এই দারিদ্র্যকে চিরদিনের জন্য নির্মূল করেছে। কমিউন ব্যবস্থা চীনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
কমিউন ব্যবস্থা চীনের পারিবারিক বন্ধনকে তছনছ করে দিয়েছে- এই প্রচারও মিথ্যা। কমিউন ব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল তো করেইনি, বরং ব্যক্তির ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্নেহ-প্রীতির বন্ধনকে আরও শক্তিশালী এবং প্রত্যেক পরিবারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও সচেতন করে তুলেছে। স্নেহ-প্রীতির বন্ধন এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা পরিবারগুলোকে অধিকতর কর্মক্ষম ইউনিটে রূপান্তরিত করেছে।
চীনের কমিউন ব্যবস্থা হচ্ছে এক নতুন ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রশাসনিক সংগঠন, যা চীনের গোটা গ্রামীণ সমাজে এনেছে এক বৈপ্লবিক রূপান্তর।
'মওলানা ভাসানীর রচনা'
সম্পাদনা: খান মাহবুব
পলল প্রকাশনী, ২০১৬
- বিষয় :
- চিন্তাবীজ
- মওলানা ভাসানী