হিমাচলের জাদুর শহর ধর্মশালা

সৌন্দর্যে ঠাঁসা হিমাচলের ধর্মশালা স্টেডিয়াম। ছবি: টুইটার
সেকান্দার আলী, ধর্মশালা থেকে
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:৫৩ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:৫৩
ব্যালকনি থেকে জোড়া পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। সন্ধ্যার কৃত্রিম আলোয় একবার দেখা হয়েছে। রংবেরঙের আলোয় সবুজ পাহাড় দেখতে ভালোই লাগে। সমতল থেকে ৭ হাজার ফুট ওপরের এই রোমাঞ্চ বেশ উপভোগ্য। হিমাচল প্রদেশের এ অঞ্চলটাকে আগে এভাবে দেখা হয়নি।
২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ কাভার করার সুবাদে লম্বা সময় পুরো ধর্মশালা চষে বেড়ানোর পরও এবার সবকিছু কেমন নতুন লাগছিল। অবকাঠামো বা উন্নয়নের জোয়ারে পাহাড় ভেসে গেছে, তা নয়। পরিবর্তনটা সময়ের। সাত বছর পরে দেখা এবং তা গ্রীষ্মের শেষভাগে। আর ষোলোর সফর ছিল মার্চের কনকনে শীতে। বরফের চাদর পরেছিল পাহাড়। বৃষ্টির ছিটে মুহূর্তে বরফ কুচিতে পরিণত হতে দেখে বিস্ময় লেগেছিল।
সেই ধর্মশালায় সোমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসে হাঁপ ধরা ভাবের উদয় হলো। তখনও জানা ছিল না, নতুন সকাল নবতর অভিজ্ঞতা দেবে। পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখার লোভে ভোরের আলো ফোটার আগে ব্যালকনিতে অপেক্ষা। তেজোদীপ্ত লাল আভা ছড়িয়ে সূর্যের উদয়কালে ঘোরলাগা বিস্ময় উপহার দেয় ধলাধারের অদূরের পাহাড়চূড়া সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে।
এগুলো যে বরফ, বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কীভাবে এসব হলো, উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ে রাতে বাজ পড়ার তীব্র গর্জনে একবার ঘুম ভেঙেছিল। হোটেল কেঁপে ওঠা এবং বৃষ্টির ঝুম শব্দের কথাও মনে পড়ে। ধর্মশালা ছাড়ার আগে এমন মন ভালো করা ভোর দেখা প্রকৃতির উপহার।
২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের সব ম্যাচ ছিল ধর্মশালায়। বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও ওমানের বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডস আর ওমানের বিপক্ষে খেলা হলেও দ্বিতীয় ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করে সুপার টোয়েলভে। সেবার কত অভিজ্ঞতাই না দিয়েছিল হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি এ শহর।
তামিম ইকবালের প্রথম এবং একমাত্র টি২০ সেঞ্চুরি দেখার স্বাদ এখনও টাটকা। যেটি দেশের একমাত্র টি২০ সেঞ্চুরি হয়ে রেকর্ডবুকে জায়গা ধরে রেখেছে। সেই তামিমকে ছাড়াই ধর্মশালায় এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কোমরের ব্যথা, ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে নিজের শেষ বিশ্বকাপটাই খেলতে পারলেন না তামিম। অথচ তিনি থাকলে ধর্মশালা স্মৃতিকাতর হতে পারত। নতুন কোনো রেকর্ডের রোমাঞ্চ উপহার দিতে পারতেন ব্যাট দিয়ে।
হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামটিতে অবকাঠামোগত বেশ কিছু পরিবর্তন আনে গত কয়েক বছরে। গ্যালারি উঁচু হয়েছে। পূর্বের মিডিয়া প্রান্তে কাঠের পাটাতনের সেই জায়গাটি কেমন সরু হয়ে গেছে। শুধু বদলায়নি পাহাড়। না ভুল বলা হলো, এক রাতের বৃষ্টি উঁচু পাহাড়কেও বদলে দিয়েছে। এক দিন আগে যেখানে সবুজ বনানী আর ন্যাড়া পাথর ছাড়া কিছু চোখে পড়েনি, সেখানে গতকাল বিকেলেও শুভ্রতা ছড়াল সাদা বরফ।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ চলাকালে যেটা টিভির পর্দায় দেখেছেন দর্শক। মাঠের স্পাইডার ক্যামেরাটা যতবার ওপরে উঠেছে, ততবারই মিলেছে বরফ দেখার প্রশান্তি। ধর্মশালায় বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে গতকাল। সাকিবরা আজ চেন্নাই যাবেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে। ধর্মশালার পাট চুকিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকরাও ছুটবেন টাইগারদের অনুসরণ করে। বিদায় ধর্মশালা, বিদায় এ শহরের ভালো মানুষকে।