ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নিজে অ্যাকাউন্ট চালাতে পারেন না অর্ধেক গ্রাহক

নিজে অ্যাকাউন্ট চালাতে পারেন না অর্ধেক গ্রাহক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০ | ১৮:১৭ | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৫৫

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের দ্রুত প্রসার হচ্ছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন এ সেবা নিচ্ছেন। সংখ্যার হিসাবেও তা অনেক। তবে অবাক করার তথ্য হলো, এসব ব্যবহারকারীর অর্ধেক এজেন্টের সাহায্য ছাড়া নিজে অ্যাকাউন্ট চালাতে পারেন না। এতে জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের আশঙ্কা বাড়ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে টাকা তোলার (ক্যাশ আউট) সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরামর্শ উঠে এসেছে এক জরিপ প্রতিবেদনে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এ জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল রোববার 'কভিড-১৯ সময়কালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অভিজ্ঞতা' শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এ সময় জরিপের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনের সঞ্চালনায় জরিপের ওপর উপস্থাপনা তুলে ধরেন ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর।
টেলিফোনের মাধ্যমে তিন হাজার ১৬৩ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিআইজিডির গবেষক ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর, আবদুল্লাহ হাসান সাফির, সাইফুল ইসলাম ও সিমাব রহমান জরিপ পরিচালনা করেন।
দেশে ২০১০ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু হয়। মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত এ সেবা নিতে এখন পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৯ কোটি ২৯ লাখ। এগুলোর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর ছিল চার কোটি পাঁচ লাখ।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে ওয়েবিনারে জানানো হয়, অংশগ্রহণকারীদের ৫০ শতাংশ এজেন্টের সহায়তা ছাড়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন না। এটি এজেন্টের ওপর অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের নির্ভরতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। এ ছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ১৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, সরকারের আর্থিক সাহায্য পেতে তারা এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে একটি এমএফএস অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তবে গত ২৯ জুন পর্যন্ত নতুন এ অ্যাকাউন্টধারীদের তিন ভাগের দুই ভাগ কোনো সাহায্য পাননি। বাকি এক-তৃতীয়াংশ সরকার থেকে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়েছেন।
জরিপ প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী নারী। অন্যদিকে, নারী এজেন্টের সংখ্যা অনেক কম। জরিপের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয়, করোনাকালে এমএফএসের মাধ্যমে জনগণের (জিটুপি) কাছে অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতির সর্বশেষ অবস্থা। এতে সাধারণ মানুষ, এমএফএস এজেন্ট ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোক্তাদের মধ্যের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে রেখে পুরো ব্যবস্থার বাধা চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হয়।
এতে আরও দেখা গেছে, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এজেন্ট ও ইউডিসি ব্যবসায়ীদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা রয়েছে। সাহায্যপ্রার্থীদের অনেকে এসব পয়েন্টে অভিযোগ নিয়ে যান। তবে এজেন্ট বা ইউডিসি ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেন না।
উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো খন্দকার শাখাওয়াত আলী বলেন, করোনার আগে একজন রিকশাচালক আয়ের একটি অংশ তাৎক্ষণিকভাবে এমএফএসের মাধ্যমে গ্রামে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানোর এ সুযোগের ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টির উন্নয়ন হচ্ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই নতুনভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। তাদের সঠিকভাবে আর্থিক সহায়তার বিষয়ে ভাবতে হবে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মারিয়া বলেন, কভিড-১৯-এর মতো দুর্যোগে এমএফএস দরিদ্রদের সহায়ক হয়েছে।
এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী বলেন, এমএফএস সেবায় প্রযুক্তিগত অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যবহারকারীদের অনেকেই এজেন্টের দারস্থ হচ্ছেন। এখন ক্যাশ আউটের সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করতে পারলে ব্যবহারকারীদের সেবা দেওয়া আরও সহজ হবে।
বিকাশের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মিজানুর রশিদ বলেন, এমএফএসে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। সব ধরনের ইউটিলি বিল পরিশোধ হচ্ছে বিকাশে। এখন পাঁচ মিনিটের মধ্যে একজন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, দ্রুতগতির ডিজিটাইজেশনকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতে হবে।
ওয়েবিনারে আরও অংশ নেন সিজিএপির পলিসি লিড গ্রেগ চেন, বিআইজিডির আরপিজি বিভাগের প্রধান মেহনাজ রাব্বানি।

আরও পড়ুন

×