বিদেশফেরত নারী শ্রমিকদের ৫৫ শতাংশকেই জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশিত কাজ এবং মজুরি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ২৩ শতাংশ। ফেরত আসা এসব নারী শ্রমিকের ৬০ শতাংশই এখন বেকার। তাদের ৬১ শতাংশের মাথায় গড়ে ৭৭ হাজার টাকার ঋণের বোঝা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 'বিদেশফেরত নারী শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন' শিরোনামের এ প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলস কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের ৫২ শতাংশ বিদেশে জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার। ৬১ শতাংশ সেখানে খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগেছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে এদের ৭ শতাংশ। ৩৮ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব নারী শ্রমিকের ৫৫ শতাংশই শারীরিকভাবে এবং ২৯ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থ। যদিও এদের ৮৭ শতাংশই কোনো চিকিৎসা পায়নি। পারিবারিক এবং সামাজিকভাবেও তারা নিগৃহীত হচ্ছে।

প্রবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি, এমন তিন জেলা চট্টগ্রাম, যশোর ও ফরিদপুরে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ৩২৩ জন ফিরে আসা নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এ জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এ ছাড়া গ্রুপ আলোচনা এবং অন্যান্য সংশ্নিষ্ট উৎস থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস ধরে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ধারদেনা করে বিদেশে যান নারী শ্রমিকরা। অথচ এর মধ্যে ২৩ শতাংশ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে। ১৮ শতাংশ এক বছরের সামান্য বেশি সময় বিদেশে থাকতে পেরেছে। ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের ৩৩ শতাংশের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ফেরত আসা ৮৫ শতাংশ নারী শ্রমিকই নিজেদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে হতাশাগ্রস্ত।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিলসের নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাকিল আখতার চৌধুরী, আব্দুল ওয়াহেদ, পুলক রঞ্জন; পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, এমএ মজিদ প্রমুখ।

প্রতিবেদনের সুপারিশে ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা; সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন; দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ইত্যাদি।

মন্তব্য করুন