ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

খরস্রোতা পিয়াইনের বুকে বইছে খরা

খরস্রোতা পিয়াইনের বুকে বইছে খরা

একসময়ের প্রমত্ত পিয়াইন নদী এখন ধুধু বালুচর।

জাকির হোসেন, গোয়াইনঘাট (সিলেট)

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ০০:৩৬ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ | ০০:৩৬

একটি চৈনিক প্রবাদ আছে, ‘নদীকে না দেখলে নদীও তোমায় দেখবে না। আর নদী দেখা বন্ধ করলেই... সব শেষ।’ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর বর্তমান চিত্র দেখলে প্রবাদটির যথার্থতা আরও বেশি উপলব্ধি করা যায়। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও খরস্রোতা পিয়াইনের বুকে বইছে খরা। একসময়ের প্রমত্ত পিয়াইন নদী এখন ধুধু বালুচর। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিস্তৃত জনপদে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের অধিকাংশ পানি প্রবাহিত হতো প্রমত্ত পিয়াইন নদী দিয়ে। এ কারণে সচল নদীপথ হিসেবে স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে পিয়াইন নদীই সীমান্ত এলাকার লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও নৌপথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল। চল্লিশের দশকে পিয়াইন-ধলাই নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে জনশ্রুতি থাকলেও কালের আবর্তনে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে পিয়াইন নদী দিয়ে ভরা বর্ষা মৌসুমেও নৌকা নিয়ে চলাচল করা দুষ্কর।

তাঁরা জানান, বালু পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৩৪ বছর ধরে এই নদী দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। তাই দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার আগে এক সময়ের প্রমত্ত এই নদী খনন করে এর নাব্য ফিরিয়ে আনার দাবি সচেতন মহলসহ স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লেবু বলেন, পিয়াইন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ডাউকি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রতি বছরই তাঁর ও তাঁর পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও জাফলং চা বাগানের ক্ষতি করছে। বিগত তিন দশকে কয়েক শতাধিক বাড়িঘর, কয়েকটি ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জাফলং চা বাগান ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পাশাপাশি প্রতি বছরের বন্যায় রাস্তাঘাটসহ গ্রামীণ অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ডাউকি ও পিয়াইন নদী দিয়ে যাতে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে সে লক্ষ্যে দ্রুত পিয়াইন নদী খননে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, পিয়াইন হচ্ছে আকটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এক সময়ের প্রমত্ত এই নদীটি রক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে খনন করে দ্রুত এর নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

পিয়াইন নদী খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, গোয়াইনঘাটের ভরাট হয়ে যাওয়া নদনদী খননের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ড্রেনেজ অ্যান্ড ইরিগেশন (এফসিডিআই) নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনায় রয়েছে। যার মধ্যে পিয়াইন নদী খননের কথাটিও গুরুত্বে সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনার আলোকে এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন ও স্টাডি শেষে পাউবোর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী ডিজাইন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পরই পিয়াইন নদীসহ ভরাট হয়ে যাওয়া গোয়াইনঘাটের অন্যান্য নদনদী খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

×