ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চাইলাম ডাল-ভাত, চলে গেল চাকরি: নৈশপ্রহরীর আক্ষেপ

চাইলাম ডাল-ভাত, চলে গেল চাকরি: নৈশপ্রহরীর আক্ষেপ

চাকরিচ্যুত নৈশপ্রহরী ফরিদ উদ্দীন

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:৪৯ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:৪০

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফরিদ উদ্দীন চাকরি করেন ডাক বিভাগে। সরকারি চাকুরে হিসেবে এলাকায় তাঁকে অনেক কিছু মনে করা হলেও নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করে মাস শেষে মাইনে পান মাত্র ৪ হাজার টাকা। দুর্মূল্যের বাজারে এই অর্থে কী-ই বা পাওয়া যেতে পারে। এর পরও সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে সমাজ-সমুদ্রের মাঝে খড়কুটোর মতো ভেসে থাকার চেষ্টা করছিলেন। আশায় ছিলেন, নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামের কথা বিবেচনা করে সরকার তাঁর বেতন বাড়িয়ে দেবে। তা আর হয়নি।

এতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তিনি অনশনে বসেন। আকুতি জানান, কয়টা টাকা যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে যেন খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন। কিন্তু তাঁর এই আকুতি চরম পরিণতি পেয়েছে।

বুধবার উপজেলার নলডাঙ্গা পোস্ট অফিসের এই কর্মচারী বলেন, সরকারের কাছে দু'মুঠো ডাল-ভাত চেয়েছিলাম। উল্টো আমাকে চাকরি থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে!

জানা গেছে, নিজ কর্মস্থলের মাধ্যমেই চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতির চিঠি পেয়েছেন নৈশপ্রহরী ফরিদ। ঝিনাইদহ ডাক বিভাগের পরিদর্শক আফিয়া খাতুন স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত রোববার হাতে পান তিনি। এতে লেখা আছে, সরকারি তথ্য ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা এবং অসদাচরণের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ফরিদকে 'পুট অব ডিউটির' আদেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পোস্ট অফিস। ছবি- সমকাল

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর সারারাত দায়িত্ব পালন শেষে ফরিদ পোস্ট অফিসের মধ্যেই ছিলেন। সকালে অন্য কর্মচারীরা এসে তাঁকে দরজা খুলতে বললেও তিনি সাড়া দেননি। দরজা না খুলে বেতন বাড়ানোর দাবিতে অনশনে বসার কথা জানান তিনি। এক পর্যায়ে বলেন, এভাবে আর চলা যায় না। আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই। পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে তাঁকে বের করে।

নৈশপ্রহরী ফরিদ বলেন, সারারাত পোস্ট অফিস পাহারা দিয়ে দিনের বেলা ঘুমাতে হয়। এ কারণে অন্য কাজও করতে পারি না। বাড়ির ভিটা ছাড়া কিছুই নেই আমার। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নামমাত্র বেতনে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই অনশনে বসেছিলাম। কিন্তু তারা অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী শোকজ নোটিশও দেওয়া হয়নি। আমার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে জেলা ডাক বিভাগের পরিদর্শক আফিয়া খাতুনের মোবাইল ফোনে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নলডাঙ্গা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আবদুল মালেক জানান, নৈশপ্রহরী ফরিদকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন অভিযোগে তাঁকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা চিঠিতে স্বাক্ষর করা কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। কোনো শোকজ নোটিশ ছাড়া কাউকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ডাক বিভাগের কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমএ হাকিম বলেন, বেতন বাড়ানোর দাবি তোলা অপরাধ নয়, বরং অধিকার। নৈশপ্রহরী ফরিদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমরা তাঁর পাশে আছি। এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করে তাঁর সাময়িক চাকরিচ্যুতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×