৭৮ লাখ টাকার ঢাকনা হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
কংক্রিটের সড়ক, টাইলস করা ফুটপাত। মাটির নিচে নালা ব্যবস্থা। স্থানে স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা। তবে কোথাও কোথাও ঢাকনা নেই। চুরি হয়ে গেছে। সেই চুরি হওয়া ঢাকনার দাম প্রায় ১ কোটি টাকা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সড়ক থেকে গত তিন মাসে ম্যানহোলের এসব ঢাকনা চুরি হয়েছে। দিনে ঢাকনা লাগিয়ে যেতেই রাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। তবে এ বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ভাঙাড়ি দোকানে অভিযান ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অন্তত ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৪৫ কিলোমিটার ড্রেনের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ম্যানহোলের ঢাকনাসহ বক্স সিস্টেমের ড্রেন। ঢাকনাগুলো স্থাপনের কয়েক মাস না যেতেই ভাটিকাশর, বলাশপুর, কেওয়াটখালী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন বাজার এলাকাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছে কেওয়াটখালী এলাকায়। অন্তত ২০০ ঢাকনা চুরি হয়েছে গত তিন মাসে। এরপর ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা থেকেও অন্তত ১৫০টি ঢাকনা চুরি হয়েছে। অন্যান্য এলাকা মিলে আরও ১৫০টি ঢাকনাসহ অন্তত ৫০০ ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়েছে গত তিন মাসে। আগে মাঝে মধ্যে দু-একটা ঢাকনা চুরি হলেও গত তিন মাসে চুরির প্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।
নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সড়কে স্থাপিত প্রতিটি ঢাকনা ২১ হাজার টাকা এবং ফুটপাতে স্থাপিত প্রতিটি ঢাকনা ১২ হাজার টাকা। সড়কে স্থাপিত প্রায় ২০০ ঢাকনা ও ফুটপাতে স্থাপিত প্রায় ৩০০ ঢাকনা মিলে অন্তত ৭৮ লাখ টাকার ঢাকনা চুরি হয়েছে গত তিন মাসে।
ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন সড়ক ও ড্রেনে অধিকাংশ ম্যানহোলই ঢাকনাবিহীন। কোথাও ম্যানহোলে বাঁশ দিয়ে সতর্ক সংকেত আবার কোথাও স্ল্যাব কিংবা ইট দিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খুদে শিক্ষার্থীসহ বয়স্ক লোকজন। ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
ভাটিকাশর এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, সিটি করপোরেশন ঢাকনা লাগিয়ে যাওয়ার পরদিনই চুরি হয়ে যায়। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়ে যেতে পারে। কিছু ম্যানহোলে তারা নিজেরাই স্ল্যাব, ইট বা বাঁশ দিয়ে চিহ্নিত করে সতর্ক করেছেন।
একই এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, মাদকাসক্ত ও পেশাদার চোরেরা ঢাকনাগুলো চুরি করে বিক্রি করে মাদক গ্রহণ করে।
ঢাকার ঢাকনা ময়মনসিংহে: ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডটি সিটি করপোরেশনের পেছনে। শাশী লজ জাদুঘরের পেছনে দেয়ালঘেঁষা ফুটপাতে বেশ কয়েকটি ঢাকনা নেই ম্যানহোলের। তাতে কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি ঢাকনা স্থাপন করা হয়েছে। লোহার ঢাকনায় এমনটিই লেখা রয়েছে। ঢাকনাগুলো ২০২৩ সালেই নির্মিত। এটিকে অস্বাভাবিক বলছেন স্থানীয়রা। কয়েকজন নাগরিকের অভিযোগ, ঢাকার ঢাকনা এখানে কীভাবে এলো? এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কারও যোগসাজশ থাকতে পারে। চুরি হওয়া ঢাকনা কিনে স্থাপন করা হতে পারে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল হক বলেন, ঢাকনাগুলো ভেঙে টুকরো করে নিয়ে যায়। এগুলো পুনরায় স্থাপনের সুযোগ নেই। ঢাকার ঢাকনা ময়মনসিংহে আসার বিষয়ে বলেন, হয়তো ভুলে চলে আসতে পারে। তিনি বলেন, কয়েকটি ভাঙাড়ি দোকানে অভিযান চালালেও সেখানে ম্যানহোলের ঢাকনা পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, চুরি হলে ঢাকনাগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন করা যায় না।
সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ঢাকনাগুলোর চাহিদা থাকায় চুরি হচ্ছে। ম্যানহোলে কংক্রিট দিয়ে স্ল্যাব করার চিন্তা করা হচ্ছে। এতে চুরি রোধ হতে পারে। যে এলাকার মানুষ সচেতন, সে এলাকায় চুরি নেই। এ কারণে স্থানীয় মানুষকে নিয়ে প্রতিরক্ষা টিম করতে বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ বলেন, মাদকাসক্তরা ঢাকনাগুলো ভেঙে নিয়ে বিক্রি করে দিত। পৃথক দুটি অভিযানে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও কিছু ঢাকনা উদ্ধার করা হয়েছিল। বর্তমানে এই প্রবণতা নেই।
- বিষয় :
- ম্যানহোল
- ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন