খুলনা মেডিকেলে ‘লিনিয়ার এক্সিলারেটর’ ১১ বছর বাক্সবন্দি

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সামনে এভাবেই ১১ বছর বাক্সবন্দি ‘লিনিয়ার এক্সিলারেটর’ মেশিন। ছবি: সমকাল
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ২২:২৪
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ‘লিনিয়ার এক্সিলারেটর’ মেশিন পাঠানো হয় ২০১২ সালে। তবে ক্যান্সার রোগীকে রেডিওথেরাপি দিতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক এ মেশিন ১১ বছরেও চালু করা যায়নি। প্রায় ১০ কোটি টাকার মেশিনটি বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সামনে। এত বছর ধরে পড়ে থাকায় যন্ত্রটি আদৌ সচল করা যাবে কিনা, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অথচ খুলনার ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি নিতে এখনও ছুটতে হয় ঢাকা ও ভারতের কলকাতায়।
গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটির এমন অবস্থার জন্য খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্য দায়ী করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা সমকালকে জানায়, ২০১২ সালের ২৯ মে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জন্য লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনটি কেনা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৩ লাখ ৬০ হাজার ইউএস ডলার। তখনকার হিসাবে যা প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে মেশিনটি বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাঙ্কার না থাকায় এটি স্থাপন করা যায়নি। এর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই বছরের ৮ আগস্ট যন্ত্রটি খুমেক হাসপাতালে পাঠায়। অথচ হাসপাতালটি থেকে এর জন্য কোনো চাহিদাই তখন দেওয়া হয়নি।
খুমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগেও বাঙ্কার না থাকায় হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মেশিনটি গ্রহণই করেননি। তখন থেকে মেশিনটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ট্রেড ভিশন লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
ওই ঘটনার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেশিনটি খুমেক হাসপাতালে স্থাপনে বাঙ্কার তৈরিতে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা অনুদানসহ অর্থ ব্যয়ের সরকারি মঞ্জুরি দেয়। তবে ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর খুলনার গণপূর্ত বিভাগ-১ চিঠি দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়, বাঙ্কার তৈরির অনুকূলে তাদের কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমেরিকার ভ্যারিয়েন মেডিকেল সিস্টেম থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর মেশিনটি স্থাপন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্র কেনার জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় মেশিনটি ফের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর ও স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত এটি ফেরত নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. মুকিতুল হুদা জানান, মেশিনটি ১১ বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটি ফেরত নিতে সাত বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এখনও ফেরত নেয়নি।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএর খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রের টাকার অপচয় হয়েছে। তার চেয়েও বড় দুর্ভোগ হয়েছে ক্যান্সার রোগীদের। খুলনার রোগীদের ক্যান্সারের সেল নষ্টে রেডিওথেরাপি নিতে এখন ঢাকায় অথবা কলকাতায় যেতে হয়। অথচ মেশিনটি স্থাপন করা গেলে তারা এখান থেকেই রেডিওথেরাপি নিতে পারতেন।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, মেশিনটি বসানোর জন্য যে ধরনের বাঙ্কার বা অবকাঠামো প্রয়োজন, তা এই হাসপাতালে নেই। মেশিনটি বাক্সবন্দি রয়েছে, কোনোদিন খোলা হয়নি। ফলে এটি ভালো আছে নাকি বিকল হয়ে গেছে, তা জানা নেই।
- বিষয় :
- খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- খুমেক