- সারাদেশ
- ব্লাস্ট রোগে বিনষ্ট শত শত বিঘা জমির ধান
ব্লাস্ট রোগে বিনষ্ট শত শত বিঘা জমির ধান

ব্লাস্ট রোগে বিনষ্ট ধান
বিঘার পর বিঘা জমি জুড়ে চাষ করা হয়েছে বোরো ধান। ক’দিন আগেও এসব ধানচাষিদের মুখে ছিল ফসল ফলানোর আনন্দমাখা হাসি। পাকা ধান ঘরে তোলার প্রত্যাশায় কৃষকরা দিন গুণছিলেন। কিন্তু সে হাসি আজ ম্লান হয়ে গেছে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের কারণে।
মাঠের দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হয় ধানগুলো পেকে আছে। কিন্তু না, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের ভেতর চাল হওয়ার পরপরই এগুলো হলুদ রঙ ধারণ করেছে। ধানের ভেতরে শুধুই চিটা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। দিশেহারা হয়ে গেছেন ধানচাষিরা। উপজেলার মাওনার ভেরামতলী, জয়নাতলী, বড় বাইদসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত শত শত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। হলুদ হয়ে ধানের শীষগুলো মরে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, দু’চোখে এখন অন্ধকার। করোনাভাইরাসের এ দুঃসময়ে অন্তত দুবেলা ক্ষেতের ধানের ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যেত। সেটাও আর হলো না। এ রোগ এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ইরি-বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে এবার ১৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। এ আবাদ থেকে ৫২ হাজার মেট্টিক টন ধানের ফলন হবে বলে প্রত্যাশা ছিল কৃষি সংশ্লিষ্টদের।
কৃষকরা জানান, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৫৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। রোপনের কিছুদিন পরেই কারো কারো ক্ষেতে ব্লাস্টের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। কৃষি অফিসের পরামর্শে সে সময় বিভিন্ন রকম কীটনাশক ব্যবহার করলে ব্লাস্ট রোগের আধিপত্য কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে আবার রোগটি ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার বড়বাইদ এলাকার এক কৃষক জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। কিন্তু তার পুরো ক্ষেতই এখন এ রোগের দখলে।
তবে শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিয়াকৈরের ওই অংশে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব আরো বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, সাধারণত ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করে। ধানের চারা রোপনের কিছুদিন পর সবুজ পাতায় কালো দাগ দেখা দেয় এবং ধানের পাতায় পচন ধরে।
মাওনা এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ধানের চারা রোপনের পর থেকেই সার্বক্ষণিক তারা মাঠে রয়েছেন। প্রথম দিকে ব্লাস্ট বিদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করে ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে আবার আক্রমণ করেছে।
তিনি বলেন, দিনে প্রচুর রোদে-রাতে কুয়াশা ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে এ রোগটি খুব সহজে আক্রমণ করে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান জানান, কিছু কিছু এলাকায় শুধু ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। রোগটি থেকে ধানক্ষেত রক্ষার জন্য কৃষি উপ-সহকারীরা সব সময় মাঠে রয়েছেন। তার প্রত্যাশা- রোগটি খুব শিগগিরই সরে যাবে।
মন্তব্য করুন