পুকুরে মিলল মাদ্রাসাছাত্রের নখ উপড়ানো বস্তাবন্দি লাশ

লাশ। প্রতীকী ছবি
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪ | ২২:৪৮
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে আব্দুল মান্নান মেহেরাজ (১৪) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার হাতের নখ উপড়ানো ও গলায় দাগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের দারুল আরকাম ইসলামিয়া মাদ্রাসার পুকুর থেকে নাজেরা বিভাগের ছাত্র মেহেরাজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করেন নিহতের বড় ভাই মো. হানিফ ওরফে সুজন। এর আগেই বুধবার রাতে মাদ্রাসার শিক্ষক আহসান হাবিবকে ৫৪ ধারায় আটক করে পুলিশ। আদালত পরিদর্শক শাহ আলম জানান, আহসান হাবিবকে পুলিশ বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেন শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মেহেরাজ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মির্জানগর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে। পরিবারের দাবি, নির্যাতন করে হত্যার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নিখোঁজের নাটক করেছে। নিহতের বড় ভাই সুজন জানান, ৬ জুন তাঁর ভাইকে মাদ্রাসার শিক্ষক আহসান হাবিব ও মোহাম্মদ ইয়াছিন মারধর করেন। খবর পেয়ে পরদিন সকালে মা নুরজাহান বেগম মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষ মহিন উদ্দিনের কাছে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এ সময় আহসান হাবিব হুমকি দেন মেহেরাজের মাকে। এর পর তিনি ছেলেকে মাদ্রাসার হোস্টেলে রেখে চলে আসেন। বুধবার বিকেলে অজু করতে গিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পুকুরের ঘাটলার নিচে বস্তা দেখতে পায়। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করলে শিক্ষার্থীরা লাশটি মেহেরাজের শনাক্ত বলে করে।
শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সোমবার থেকেই নাকি মেহেরাজ নিখোঁজ। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানায়নি। এখন তারা বলছে, ‘গোসলের উদ্দেশে বেরিয়ে নিখোঁজ ছিল মেহেরাজ। পানিতে ডুবে মারা গেছে।’ কিন্তু মেহেরাজ সাঁতার জানে। তাছাড়া কেউ কি বস্তাবন্দি হয়ে গোসল করে? আমার ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছে তারা। মেহেরাজের ডান হাতের তিনটি আঙুলের নখ উপড়ানো ও গলায় আঙুলের দাগ পাওয়া গেছে।
সুজনের অভিযোগ, সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়। হত্যা মামলা করতে চাইলেও ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী নেননি। তিন মাস পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তা দেখে মামলা নেবেন বলে জানান। এর পর আমরা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহিন উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
- বিষয় :
- নোয়াখালী
- মাদ্রাসাছাত্র
- মরদেহ উদ্ধার