ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভিটেমাটি হারিয়ে গোমতীর চরে মানবেতর জীবন মা ও দুই মেয়ের

ভিটেমাটি হারিয়ে গোমতীর চরে মানবেতর জীবন মা ও দুই মেয়ের

গোমতীর চরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সহায়সম্বলহীন এক মা। ছবি: সমকাল।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:২৮ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:৩৩

কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্বামীর ভিটা হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে গোমতীর চরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সহায়-সম্বল হীন এক বিধবা নারী। প্রচণ্ড শীত আর জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানে বিনিদ্র রাত কাটছে তাদের।

সরেজমিনে দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়ন এর চানপুর গ্রামের গোমতী নদীর চরে গিয়ে দেখা যায়, রাবেয়া বেগমের স্বামী আবুল কালাম দীর্ঘদিন যাবৎ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। স্বামীর ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে এক এক করে সব কিছু বিক্রি করতে হয় রাবেয়াকে। তবুও কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। স্বামীকে বাঁচাতে তাই শেষ সম্বল ও মাথা গোঁজার ঠাঁই একমাত্র ভিটেটাও বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। রাবেয়ার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত বছর জানুয়ারিতে মারা যান আবুল কালাম। স্বামীর মৃত্যুর পর কপর্দকহীন রাবেয়া যেন অথৈ সাগরে এসে পড়েন। এরই মাঝে প্রায় দেড় মাস আগে বিক্রি করা ভিটায় থাকা ঘরটি ভেঙে দখল নেয় বর্তমান মালিকরা। পরে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে, গোমতী নদীর চরে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন রাবেয়া।

ভাঙ্গাচুরা দুইটি টিনের চালা আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে ছাউনির মতো বানিয়ে তার নীচে বসবাস করছেন তারা। চালার খুপরিতে বাস করলেও তাতে নেই কোনো আসবাব। মা-মেয়ে তিনজন একটি নড়বড়ে চৌকিতে বিছানা পেতে রাত যাপন করেন। থাকা, খাওয়া সবই চৌকির ওপর। নেই রান্নাঘর, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা কিংবা নিরাপদ টয়লেট। নেই বিদ্যুৎ, রয়েছে সাপ, বিচ্ছু ও শিয়ালের ভয়। স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে এমন মানবেতর জীবন পার করছেন করছেন রাবেয়া বেগম।

মা রাবেয়া জানান, বৈবাহিক জীবনে তিনি চার কন্যার মা। এর মধ্যে দুই জনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকী দুই মেয়ের একজন আকলিমা আক্তার পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং আরেকজন সানজিদা আক্তার পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। স্বামীর ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ সম্বল ও মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরের ভিটেটা বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

তিনি আরও জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের ভিটায় থাকা ঘরটি ভেঙ্গে তাদের উচ্ছেদ করে দেয় ভিটার বর্তমান মালিকরা। পরে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে, গোমতী চরে এসে নদীর তীরবর্তী একটি পরিত্যক্ত জায়গায় দুইটি চালা দাঁড় করিয়ে বসবাস করছেন তারা। মাঘের শীত আর নিরাপত্তাহীনতায় দুই মেয়েকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।

তিনি আরও জানান, সংসার চালাতে এখন তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বানিয়ে, মেয়েদের স্কুলের সামনে চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।

রাবেয়া বেগম আরও বলেন, দুই মেয়েকে নিয়ে মাথা গোঁজার জন্য সরকারিভাবে একটু জায়গা ও ঘরের ব্যবস্থা হলে উপকৃত হবো।

স্থানীয় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন রুহুল বলেন, বিষয়টা আমি ওই ওয়ার্ডের মেম্বারের মাধ্যমে জেনেছি। পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদেরও অনুরোধ করবো তারা যেন এই অসহায় বিধবা ও তার মেয়েদের পাশে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা বলেন, রাবেয়ার দুর্দশার বিষয়টি জেনে খুব খারাপ লাগল। এ বিষয়ে আমি যত দ্রুত সম্ভব খোঁজ-খবর নেব। সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব তাকে সহায়তা করা হবে।

আরও পড়ুন

×