ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

মন্দির ভাঙচুর ও ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

মন্দির ভাঙচুর ও ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি: সমকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ও ইশ্বরগঞ্জ সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫:৪০ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫:৪১

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলায় ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান অপসারণের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের অভিযোগ, ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ মহাশ্মশান ও মন্দির উচ্ছেদ করে গরুর হাট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। 

রোববার দুপুর ১২টায় ইশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কে ৪ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে শনিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি আবেদন করেন।

ঈশ্বরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘গতকাল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ইউএনওর ভুল বোঝাবুঝির কারণে আজকে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক পিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘উচাখিলা মহাশ্মশানটি আমাদের ২০০ বছরের ঐতিহ্য। এখানে আমাদের মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদ আমাদেরকে বিগত কয়েকদিন যাবত বলছেন, মহাশ্মশানের জায়গাটিতে গরুর হাট নির্মাণ করা হবে। আর মহাশ্মশানটি অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু মহাশ্মশান এবং মন্দির স্থানান্তরযোগ্য নয়। গতকাল ইউএনওর নির্দেশে একটি মহল বালু ভরাটের নামে আমাদের মন্দিরটি ভেঙে দেয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজকে রাস্তায় নেমে আসে।’

উচাখিলা মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি পরেশ সাহা সমকালকে বলেন, ‘মহাশ্মশানটি সিএস ২২১ দাগে অবস্থিত। এটি ২০০ বছর যাবত মন্দির এবং মহাশ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদেরকে এ জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার জন্য একটি পক্ষ কয়েক মাস যাবত হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অবশেষে গরুর হাট তৈরির নাম করে আমাদের মহাশ্মশানের জায়গায় বালি ভরাট করে উচ্ছাদের চেষ্টা করছে তারা। গতকাল আমাদের মন্দিরের সবগুলো পিলার ভেঙে দেয়। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আঘাতের বিচার সরকারকে অবশ্যই করতে হবে।’ 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য সচিব বিজয় মিত্র শুভ বলেন, ‘মহাশ্মশানটি দখল এবং অপসারণ করার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি আসছিল। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি আগে থেকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঐতিহ্যবাহী মহাশ্মশানটি যেখানে আছে সেখানেই এটি রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর এর পেছনে যদি কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকেন তাহলে তার বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। মন্দির বা মহাশ্মশান সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। গরুর হাটে কাজ করার সময় ভেকু মেশিনের ড্রাইভার অসাবধানতাবশত মন্দিরের পিলার ভেঙে থাকতে পারে। তবে আমি শ্মশান কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি শ্মশানের সংস্কার কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মন্দির এবং শ্মশান ভাঙচুর করে আমার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে।’

আরও পড়ুন

×