ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

মাত্র ৭ দিনেই রাস্তা ফেটে চৌচির, উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

মাত্র ৭ দিনেই রাস্তা ফেটে চৌচির, উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেশি ভেঙে যাওয়া অংশ পুণঃনির্মাণের জন্য শ্রমিক লাগিয়ে পিচ উঠিয়ে ফেলছে -সমকাল

জামির হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ০২:৪৭

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ডাকবাংলা পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্ত নির্মাণের ৭ দিনের মাথায় সড়কের কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে। এছাড়াও সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, বৃষ্টির কারণে এমনটি হয়েছে। এদিকে সোমবার বিকালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি বেশি ভেঙে যাওয়া অংশ পুণঃনির্মাণের জন্য শ্রমিক লাগিয়ে পিচ উঠিয়ে ফেলছে। 

সোমবার বিকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কালীগঞ্জ থেকে গান্না হয়ে ডাকবাংলা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা মজবুত করণসহ নির্মাণ কাজ চলছে। কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাকাকরণের জন্য কার্পেটিং কাজ শুরু করে ৪ থেকে ৫ দিনে কমপক্ষে ৪ কিলোমিটর কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সড়কের শ্রীরামপুর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এলাকবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক লাগিয়ে বেশি খারাপ অংশের পিচ তুলে ফেলছে।

জানা গেছে, খুলনার মুজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কিন্তু হাত বদল হয়ে কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম মিয়া। এ রাস্তার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। টেন্ডার শেষে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। রাস্তা খোঁড়া এবং ইট বালুর কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগেই। এরপর সম্প্রতি শুরু করেছে কার্পেটিংয়ের কাজ।

সড়কটির কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়েছে। তবে সিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ সম্পন্নের তিন বছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুণঃমেরামত করবেন। বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তার সমস্যা হয়েছে। তবে কাজ শুরু হলে আগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের কাজ করা হবে।

ওই সড়ক সংলগ্ন শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আশানুর রহমান জানান, অতি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে রাস্তা করতে না করতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

ওই গ্রামের বাসিন্দা পান্না মিয়া জানান, রাস্তা নির্মাণের এক সপ্তাহ পার হতে পারলো না, কিন্তু পিচ ওঠে যাচ্ছে। তাহলে কয়দিন টিকবে? নির্মিত প্রায় ৪ কিলোমিটারের মত সমস্ত অংশটুকুই নিম্নমানের জিনিস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণটাই পিচ তুলে পুণঃনির্মান করতে না পারলে সড়ক নিয়ে জনভোগান্তি দূর হবে না।

এদিকে কাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম মিয়া রাস্তার কাজে কোন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না দাবি করে জানান, যেখানে পিচ উঠে যাচ্ছে, সেখানে টিউবওয়েল ও বৃষ্টির পানি যায়, যে কারণে এমন হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির দিনে কাজ করায় এমনটি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তা পুণরায় করা হবে বলে যোগ করেন স্থানীয় এই ঠিকাদার।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার নির্মাণে ত্রুটির কথা স্বীকার করে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। নিন্মমানের ত্রুটিপূর্ণ অংশগুলো পুণরায় নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, নির্মিত সড়কের অংশটুকু তিনি নিজে গিয়ে দেখেছেন। সেখানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা পেয়েছেন।  বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×