জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অনন্য গৌরবের পথরেখা

মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের টহল সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ০০:৩৩
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ বুধবার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের হাত ধরে শান্তিরক্ষা মিশন এক গৌরবের পথরেখা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষায় দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনছেন তারা।
শান্তি মিশনে মানবিক নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দেশের মর্যাদাকে আরও উঁচুতে নিয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিরক্ষার এক অনন্য নাম। শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, জাতির পিতার দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ৭১টি শান্তি মিশনজুড়ে সংঘাত ও অভ্যুত্থানে বিপর্যস্ত এলাকার মানুষের সাহায্যে ও প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত।
দিবসটি পালনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে শহীদ শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’ উদ্বোধন করবেন। পরে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শাহাদাত বরণকারী ও আহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আরও উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, পুলিশপ্রধানসহ অনেকে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের পতাকাতলে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ১৯৯৩ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয়। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের নানা সংঘাতময় এলাকায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পদচিহ্ন রয়েছে। প্রায় চার দশকের যাত্রায় তারা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ১৩টি দেশে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৯২ শান্তিরক্ষী মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে ৪৯৩ জন নারী। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন শহীদ হয়েছেন। এ বছর তিন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
এবার শান্তিরক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘ফিট ফর দ্য ফিউচার, বিল্ডিং বেটার টুগেদার’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোয় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে। এ ছাড়া শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।
জানা গেছে, পুলিশের ২১ হাজার ৪৫৩ শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মিশন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী ১ হাজার ৮১০ জন। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান ও লিবিয়ায় শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের ১২০ নারী সদস্যসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন।
- বিষয় :
- জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন