রাজউকের গড়িমসিতে ছয় বছরেও শুরু হয়নি কাজ
ম্যাপ
অমিতোষ পাল
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:১০ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:১৩
ছয় বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দিয়ে সব ধরনের নকশা প্রণয়ন করা হলেও গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। অর্থ বরাদ্দে সরকারের কার্পণ্য না থাকলেও স্রেফ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে আলোর মুখ দেখছে না প্রকল্পটি। অথচ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে গুলশান-বনানী-বাড্ডা এলাকার যানজট নিরসন হতো; বাড়ত লেকের পাড়ের সৌন্দর্য।
জানা যায়, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের আধুনিকায়ন ও এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৭ সালে বুয়েটকে নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেয় রাজউক। পরে বুয়েট বিশেষজ্ঞ দল ২০১৮ সালে নকশা প্রণয়ন করে। এ জন্য খরচ হয় দুই কোটি টাকা। এমনভাবে নকশা প্রণয়ন করা হয়, যাতে তিনটি লেকের পাশ দিয়ে থাকবে প্রশস্ত সড়ক। লেকের পাড় ঘেঁষে থাকবে ওয়াকওয়ে। দু’পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে লেকের ওপর থাকবে ৯টি ব্রিজ ও চারটি ওভারপাস। যানবাহনকে যাতে সিগন্যালে পড়তে না হয়, সে জন্য ক্রসিংয়ে রাখা হয় ওভারপাস। এর নকশা এমনভাবে করা হয়, ওপর থেকেই যানবাহনগুলো যেদিকে খুশি যেতে পারবে। ফলে যে কোনো যানবাহন সহজেই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দ্রুত পৌঁছে যাবে।
এটা বাস্তবায়িত হলে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকার বিদ্যমান যানজট আর থাকবে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে নকশায় যুক্ত করা হয়, যাতে ঢাকা ওয়াসার দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে গিয়ে ওই এলাকার বর্জ্য পড়বে। এতে ওই এলাকার বিদ্যমান স্যুয়ারেজ সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেট ধরা হয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো কাজ সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, কড়াইল বস্তি ঘিরে প্রভাবশালী চক্র সক্রিয় থাকায় উচ্ছেদ করা রাজউকের জন্য দুঃসাধ্য হতে পারে।
বুয়েটের প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, মহাখালী-গুলশান লিঙ্ক রোডের মাঝে ব্র্যাক সেন্টারের পাশে লিঙ্ক রোডের বিদ্যমান রাস্তা তুলে দু’পাশের লেকের মধ্যে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। সেখানে তৈরি করা হবে ওভারপাস। একইভাবে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে দু’পাশের লেকে নৌ চলাচলের জন্য তৈরি করা হবে আরেকটি ওভারপাস। আবার গুলশান-১ থেকে বাড্ডা লিঙ্ক রোডে একটি ওভারপাস স্থাপন করে বিদ্যমান রাস্তা তুলে দেওয়া হবে। এসব স্থানের ওভারপাস এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে ওপর থেকে যানবাহনগুলো যে কোনো দিকে টার্ন নিতে পারে। এমনভাবে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হবে, যাতে হাতিরঝিলের এফডিসি পয়েন্ট থেকে একটি নৌযান বনানী কবরস্থান বা বারিধারা ইউনাইটেড হাসপাতাল পর্যন্ত সহজেই যাতায়াত করতে পারে। আর বারিধারা গোলচত্বর থেকে দক্ষিণে যাতায়াতের জন্য সেখানে লেকের পাড়ে রাস্তা ও ওয়াকওয়ে তৈরির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সেখানে লেকের ওপর দিয়ে ওয়াকওয়ে ও সড়ক নির্মাণের কথা বলা আছে নকশায়। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে থাকবে পার্ক ও বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত স্থান। সুবিধাজনক বিভিন্ন পয়েন্টে রোপণ করা হবে এক হাজার গাছ।
জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। পরিষেবা স্থানান্তরে ৩১ কোটি টাকা; ব্রিজ, ওভারপাস, লেকড্রাইভ, ওয়াকওয়ের জন্য ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, লেক খননে ১৪১ কোটি টাকা, কড়াইল বস্তিবাসীর পুনর্বাসনে ১৭ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন খাতে মোট খরচ ধরা হয় ৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজউক ব্যয় করবে ১৪৭ কোটি টাকা। বাকিটা হবে সরকারের অর্থায়নে।
বুয়েটের পরামর্শক দলের প্রধান ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় এমনিতেই যানবাহনের চাপ বেশি। সেখানকার সড়কগুলোতে প্রতিদিন কী সংখ্যক যানবাহন চলে, সেটি গবেষণা করে নকশাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এটা বাস্তবায়িত হলে পুরো এলাকা উন্নত ও আধুনিক শহরের আদলে গড়ে উঠত। কিন্তু রাজউক কেন গড়িমসি করছে, তা জানি না।
এই উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. সাবের আহমেদ বলেন, বিভিন্ন কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এখন রাজউক প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায়। ওই এলাকার রাস্তা অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আর নিতে পারছে না। আর এটা করা গেলে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন তৈরি হবে, তেমনি নৌ যোগাযোগ বাড়বে। লেকও দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।