আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ (তৃতীয়) এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে গড়ে জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৫তম (নমিনাল) এবং ২৯তম (পিপিপি) স্থান অর্জন করেছে, যা বিগত অর্থবছরে ছিল ৩৯তম (নমিনাল)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০২০) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ৩১৮ (নমিনাল) বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় হলেও রপ্তানিতে প্রথম, ধান ও আলু উৎপাদনে যথাক্রমে চতুর্থ ও সপ্তম, সবজি ও মাছ উভয় উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে নবম এবং গবাদিপশু পালনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ ভাগই হয় বাংলাদেশে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ (বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ)। পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো, মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে প্রধান অবদান রেখেছে সেবা, শিল্প ও কৃষি খাত যথাক্রমে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৫১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ৩৫ এবং ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির শতাংশ হিসেবে দেশে এখন মোট খরচ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মোট জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরে ছিল ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ব্যক্তি খাত ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ + সরকারি খাত ৮দশমিক ১২ শতাংশ), যা বিগত অর্থবছরে ছিল ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বছরটিতে মোট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম এবং বিশ্বের ০ দশমিক ২৯ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা বিশ্বের ২ দশমিক ১১ শতাংশ। বিআইএসআর মনে করে, বাংলাদেশে আরও অধিক পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, যদি ব্যবসায় এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।

বছরটিতে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ কম এবং মোট আমদানির পরিমাণ ৪৬ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা বিগত বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিগত বছরের তুলনায় কম হলেও, মাথাপিছু আয়ের উন্নতি হয়েছে। বিগত অর্থবছরে ২০১৮-১৯ মাথাপিছু আয় ছিল ১৭৫২ মার্কিন ডলার, যা জুলাই ২০২০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ২০৬৪ মার্কিন ডলার হয়েছে; মাথাপিছু আয়ের রেকর্ডে যা এ যাবত সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর লেবার ফোর্স সার্ভের (মার্চ, ২০১৭) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৬৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন (পুরুষ ৪৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন এবং মহিলা ২০ মিলিয়ন) শ্রমশক্তির মাঝে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন জনবল বেকার রয়েছে, যা মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ডিসেম্বর, ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার প্রায় ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। যদিও গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেকারত্ব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা, তথাপি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বেকারত্ব কমানোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিকল্পনা নেই। বিআইএসআরের পরামর্শ হলো- অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সৃজনশীল পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নযোগ্য কর্মকৌশল আরও সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত উপায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিআইডিএসের (এপ্রিল, ২০১৯) গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। করোনার প্রভাবে ২০২১ সালে এসে ৩-৫ শতাংশ বাড়তে পারে। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ, যা গত বছর ছিল প্রায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ (- ০ দশমিক ৮ শতাংশ)।

তবে দারিদ্র্যবিমোচনে অগ্রগতি হলেও সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ধনিক শ্রেণির সংখ্যা দ্রুত বাড়ার ফলে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক খাতে উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশে আয়বৈষম্য প্রকট। দেশের গরিব ৪০ শতাংশের আয় মোট আয়ের মাত্র ২১ শতাংশ, প্রথম ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর কাছে ২৭ শতাংশ আয় চলে যায়, শেষ ১০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আয়। অর্থাৎ শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী শেষ ১০ শতাংশের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেশি আয় করে। যার ফলে মোট দেশজ উৎপাদন/আয় বৃদ্ধি পেলে তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে কম পৌঁছায়। ইউএনডিপির ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গিনি সূচকের পয়েন্ট ০ দশমিক ৪৭৮। কোনো দেশের এই স্কোর ০ দশমিক ৫০ এর ঘর পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সরকারের কর আরোপের ফলে বিগত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমেছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর চাপ কমাতে এবং ঋণের অতিরিক্ত বোঝা থেকে বাঁচতে এটির ওপরে কর আরোপ করেছে সরকার।

গড় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে বছরটিতে প্রায় ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত বছর ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি ছিল বহুল আলোচিত।

পোশাকশিল্পের পর চামড়া এবং পাট বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পের মধ্যে অন্যতম। এ বছর শিল্পদ্বয়ের তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি, বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল যুগের অবসান ঘটল। পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে চামড়ার দাম ঠিক করা হলেও বেশিরভাগ চামড়া নামমাত্র দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ জনগণ।

বিশ্ব মন্দায় অর্থনীতি, আমদানি এবং রপ্তানিতে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানের অভাব, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বাজেট তৈরি করা ছিল সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বরাবরের মতো বাজেট ঘাটতি বিদ্যমান রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বাজেটের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত অর্থবছরের (২০১৯-২০) তুলনায় ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি এবং মোট জিডিপির ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। উন্নয়ন বাজেট ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ঘাটতি বাজেট ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এই অর্থবছরেও বাজেট প্রস্তুতির পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, যদিও বিআইএসআর দীর্ঘদিন ধরে চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরির বিষয়ে প্রস্তাব দিয়ে আসছে। চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরি না হওয়ার ফলে অর্থ অপচয়ের বা অব্যবহূত থাকার সুযোগ থেকে যাচ্ছে, যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ তা নিয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা করে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের বাংলাদেশ অগ্রগতি রিপোর্ট ২০২০ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি সাহায্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমেছে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় বিদেশি সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল সর্বোচ্চ প্রায় ৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য (নভেম্বর, ২০২০) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৪১,০৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩১,৭২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্সকে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে ২০২০ সালে মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এ যাবত সর্বোচ্চ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২০ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ এখন নয় মাস পণ্য আমদানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় (সর্বনিম্ন তিন মাসের আমদানির সক্ষমতা) ৩ গুণ বেশি। এখন প্রয়োজন আয় বৃদ্ধিতে বৈদেশিক রিজার্ভ-এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিএমইটির (মে, ২০২০ পর্যন্ত) অনুসারে, মোট ১৮১২১৮ জন শ্রমিক (নারী শ্রমিকের সংখ্যা ১৮,৮১৩) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়েছে কর্মসংস্থানের জন্য, যা বিগত বছরে ছিল ৬০৪০৬০।

অর্থ পাচার কিছুটা কমলেও, খেলাপি ঋণ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২,৪০,১৬৭ কোটি টাকা, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ আরও ৯-১০ শতাংশ বাড়তে পারে। সরকারি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ করতে বললেও বেশিরভাগ ব্যাংক তা গোপন করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বছর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বাধিক ছিল, তবে কিছু বেসরকারি ব্যাংকেরও ২০২০ সালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল। অকার্যকর, ঋণ বৃদ্ধি ও পুঁজির অপর্যাপ্ততা ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারকে জনগণের করের টাকা থেকে খরচ করতে হয়, যা দীর্ঘায়িত হলে করদাতারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে এবং বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ এগিয়ে ১৩৩তম। অগ্রগতি সত্ত্বেও সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। বিগত বছরের মতো আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম, শীর্ষে আছে শ্রীলঙ্কা। বিআইএসআর মনে করে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দৃঢ় অঙ্গীকার থাকলে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মানব উন্নয়নে আরও কয়েক ধাপ উন্নতি করা সম্ভব।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের আগস্টের শেষে, দেশে ই-কমার্স ব্যবসা-বাণিজ্যের বাজার ছিল ১৬৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন টাকা, যা ২০১৬ ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন টাকা। গত পাঁচ বছরে দেশের ই-কর্মাস ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩০ গুণ। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন এবং প্রযুক্তিগত বিকাশের জন্য বাংলাদেশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম পথিকৃৎ। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে মোট আউটসোর্সিং প্রবাহের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই, ২০১৯) অনুসারে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনলাইনে শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে। এই সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিনির্ভর খাতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিয়মিত কাজ করছে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি যুবক।

২০২০ সাল ছিল সক্ষমতা প্রমাণের বছর। মহামারি করোনাভাইরাস, ৩১ জেলায় বন্যা, ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় আম্পানসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে।