ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

মতামত

গায়েবি-ভূতুড়ে মামলার কী

গায়েবি-ভূতুড়ে মামলার কী

মাহফুজুর রহমান মানিক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ০৭:৩২ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ | ০২:২১

কোনো ঘটনায় উপস্থিত না থেকেও যে মামলা দেওয়া হয় সেটা গায়েবি মামলা। কিন্তু কোনো ঘটনাই যদি না ঘটে এমন মামলার নাম হতে পারে ভূতুড়ে মামলা। শনিবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনের শিরোনামও সে কথাই বলছে- 'এত্ত ককটেল বিস্ম্ফোরণ কেউ শোনেনি, দেখেনি'। কিন্তু মামলা হয়ে গেছে। যেখানে ঘটনা ঘটার পরও, প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলা নিতে চায় না; সেখানে ঘটনা না ঘটার পরও মামলা হয় কীভাবে?

সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, এক ব্যক্তি সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা থানায় বিস্টেম্ফারক আইনে মামলা করেন। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একজন নেতা হিসেবে যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন। মামলাটিতে বিরোধী দল বিএনপির ২২ নেতার নাম উল্লেখ করে অভিযোগ হিসেবে কুড়িল প্রগতি সরণিতে বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশের বাস ভাঙচুর, ককটেল বিস্টেম্ফারণসহ লাঠিসোটা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ওপর হামলার কথা বলা হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদক সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, সেদিন ওই স্থানে বিএনপি বা ছাত্রদলের কোনো ধরনের কর্মসূচি ছিল না। তবে সে স্থান থেকে দূরে ছাত্রদলের একটি মশাল মিছিল হয়। ওই মিছিল থেকে কারও ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। উল্টো পুলিশ সেখান থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তবে সেটা ভাটারা থানার মধ্যেই পড়েনি।

রাজশাহীর সাম্প্রতিক মামলাও তথৈবচ। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। যেখানে ককটেল বিস্টেম্ফারণ ঘটিয়ে, ইট ও পাথর নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। অথচ, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেখানে সভা দূরে থাক, একজন মানুষও ছিল না। তবে সেখানে পুলিশ আসার পর বিস্ম্ফোরণে শব্দ হয় এবং স্থানীয়দের ডেকে নিয়ে ককটেল, পাথর ও লাঠি পাওয়ার কথা জানায়। এভাবে কোথাও গায়েবি মামলা আবার কোথাও ভূতুড়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, জুলাই থেকে গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু হয় এবং বিএনপির সাম্প্রতিক গণসমাবেশ ঠেকাতে মামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে। 

গায়েবি মামলার অধিকাংশই যে রাজনৈতিক মামলা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুত রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে মামলার ব্যবহার অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। নব্বই-পরবর্তী সময়ে প্রতিটি সরকারের আমলেই এ ধরনের মামলার প্রবণতা আমরা দেখেছি। এ সময়ে রাজনৈতিক মামলা যেমন আমরা দেখেছি, তেমনি রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা আমরা জানি। তাঁর জীবদ্দশায় মামলার গতিপ্রকৃতি আর তাঁর রাজনৈতিক নড়াচড়ার মধ্যে যোগসূত্র দেখেছেন অনেকেই।

সময়ের পরিক্রমায় রাজনৈতিক মামলার ব্যবহার বেড়েছে আরও খারাপভাবে। ঘটনায় জড়িত না থাকলেও কিংবা ঘটনা না ঘটলেও যেভাবে মামলা হচ্ছে এবং সে মামলায় এমনকি যেভাবে গ্রেপ্তারও হচ্ছে, তা ভালো লক্ষণ নয়। ক্ষমতা যেহেতু চিরস্থায়ী নয় সেহেতু আজকের বিরোধী দল যেভাবে এর শিকার হচ্ছে পরবর্তীতে এরা ক্ষমতায় এলো এর আরও নগ্ন প্রয়োগ হতে পারে। অতীতেও আমরা এমন প্রমাণ দেখে আসছি। সেজন্য সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিকদের দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যদি অধিক উৎসাহী হয়ে অন্যায় কিছু করে থাকে, সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কোনোক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।

গায়েবি মামলার পর আমরা ভূতুড়ে মামলা দেখছি। বাড়াবাড়ি এখানেই কী থেমে থাকবে? মনে হয় না।

আরও পড়ুন

×