ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

মুক্তগদ্য

বর্ষা আনুক মঙ্গলবারতা

বর্ষা আনুক মঙ্গলবারতা

অলংকরণ:: বোরহান আজাদ

এস এম আল-আমিন

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪ | ১২:৫৫

আষাঢ়-শ্রাবণ মানেই যেন সুবাসিত চারপাশ। নানা বর্ণ আর রূপের মাধুরী মিশিয়ে প্রকৃতিকে ফুলের সৌরভে ভরিয়ে তোলে বর্ষা রানী। আষাঢ়-শ্রাবণে দেখা মেলে বাদল হাওয়া। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলও দেখা যায় চারপাশে। কদম ছাড়াও এ সময় দেখা যায় কেয়া, জুঁই, বেলি, বকুল, গন্ধরাজ, রক্তজবা, টগর, শ্বেতকাঞ্চন, দোলনচাঁপা, সন্ধ্যামালতী, কামিনীর মতো ফুল।

বর্ষা মানেই জল, জলজ ফুলের মেলা। তাই বর্ষায় এলেই জলের গায়ে মেলা বসে শাপলা-শালুক-পদ্মার। আবার অবহেলিত হলেও এ সময়ে কচুরিপানা ফুলও বর্ষা ঋতুর সৌন্দর্যে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। শ্রাবণে সারাদিন নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোটাছুটির পর সন্ধ্যার আগে দেখা মেলে নানা রঙের হাতছানি। এক সময় বর্ষা ঘিরে অনেকটাই বদলে যেত বাঙালির জীবনযাত্রা। এ যে জলের দেশ– নদী, খাল আর বিলের দেশ। ভরা বর্ষায় মাঠঘাট চরাচর যখন ভেসে যেত বানের জলে, তখন বদলে যায় আবহমানকালের বাঙালি জীবনযাপনও। জল বাঁচিয়ে কোনোরকমে রান্না-খাওয়া সেরেই সবাইকে আশ্রয় নিতে হতো ঘরে। 

এ সময় নারীরা ব্যস্ত হতেন বিভিন্ন রকম সৃজনশীল কাজে। নানা রকম সূচিকর্ম, কারুকার্য ইত্যাদিতে সময় কাটাতেন তারা। অন্যদিকে এ বর্ষাতেই জমে উঠত নৌকাবাইচ উৎসব। সেসব দিন গত হয়ে বাঙালি জীবনে প্রবেশ করেছে শহুরে জীবনযাপনের নানা বৈচিত্র্য। শুধু গ্রাম নয়, অস্তিত্ব সংকটে টিকে থাকা শহুরে গুটিকয় গাছপালাকেও করে তোলে যৌবনবতী।

একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে চার দেয়ালে আটকে থাকা মানুষগুলো। যদিও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি অনেকটা কেড়ে নেয় সে শান্তির নিঃশ্বাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে যেতে বর্ষার ঝাপটায় ভিজে নেয়ে একসা হওয়া যখন সেই জীবনের অংশ, তেমনি পাকা রাস্তায় জল জমে যন্ত্রচালিত গাড়ি আটকে যাওয়াও সেই জীবনের অংশ। এমনকি খোদ রাজধানীসহ বড় বড় শহরের প্রধান সড়কে জল জমে যাওয়ার চিত্র দেখা যায় বর্ষার শুরুতেই। জলাবদ্ধতা, রোগশোক সত্ত্বেও বাঙালি জীবনে এখনও আষাঢ়-শ্রাবণ আসে রোমান্টিক বার্তা নিয়েই। তাই তো বৃষ্টির দেখা পেতে না পেতেই ঘরে ঘরে চুলায় বসে খিচুড়ির হাঁড়ি। 

বৃষ্টির দিন খিচুড়ি আর আচার, ভর্তা, ডিম বা মাছ-মাংসের নানা আয়োজন করে শহুরে বাঙালি। তাই বলা যায়, খিচুড়িও যেন এখন বৃষ্টিযাপনের অংশ। বৃষ্টির সঙ্গে আলস্য আর গল্পগুজবের যেন সুপ্রাচীন সম্পর্ক। 

প্রাচীন বাংলায় যেমন মাঠ-ঘাট পেরিয়ে সুদূর গ্রাম থেকে ভেসে আসত বাঁশির সুর অথবা ভাটিয়ালি-কীর্তন, তেমনি ঘরে বসে গল্পগুজবেও কাটত সময়। কিন্তু আধুনিক এই ব্যস্ত সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ইউটিউব দেখা, গান শোনা, গেমস খেলা, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা টিকটকের মতো ডিজিটাল মাধ্যম নতুন অভ্যাস যুক্ত হয়েছে আমাদের জীবনযাপনের তালিকায়; যা আবহমান বাংলার বর্ষার উপলব্ধি থেকে তরুণদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কবি কালিদাস মেঘদূত কাব্যে মেঘকে দূত করে পাঠিয়েছিলেন যক্ষপ্রিয়ার কাছে। যক্ষের মনের খবর পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা পেরিয়ে মেঘ পৌঁছে দিয়েছিল তার প্রিয়ার কাছে। মেঘ-বর্ষার সে রোমান্টিক ভাবনা আজকের নয়, সেই আদিকাল থেকেই। বর্ষা এসব কিছু ছাপিয়ে বয়ে আনুক মঙ্গলবারতা।

যুগ্ম আহ্বায়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি

আরও পড়ুন

×