ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত

ইসরায়েলের যুদ্ধ সম্প্রসারণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিষ্ক্রিয় কেন

ইসরায়েলের যুদ্ধ সম্প্রসারণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিষ্ক্রিয় কেন

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জো বাইডেন।

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪ | ২২:৩০

লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান যুদ্ধের এ বছরে নতুন কৌশলগত বাস্তবতাকে প্রদর্শন করবে। এতে এক সময়ের মহাশক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্র ইসরায়েল ও ওই অঞ্চলের সংশ্লিষ্টদের দমাতে অনেকটা সামর্থ্যহীন হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের কয়েক সপ্তাহের অনুরোধের পরও সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন। গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির কথাও বলে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এসবের কিছুই আমলে নেয়নি ইসরায়েল।

মঙ্গলবার সিএনএনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। লেবাননে স্থল অভিযানের ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, দক্ষিণ লেবাননে চালানো আগের অভিযানগুলো সম্পর্কে তিনি জানেন। এ জন্য ইসরায়েলকে থামাতে চাইছেন। বাইডেন যখন এ মন্তব্য করলেন, তখন নেতানিয়াহু ইরানের একটি সম্প্রচারমাধ্যমকে বলছেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। 

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ দূরত্বের প্রভাব পড়ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও। বাইডেন জানেন, মার্কিন রাজনীতিতে নেতানিয়াহু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর সামরিক চালও খুব সীমাবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস কার্যত প্রশাসন নিয়ে ব্যস্ত, যদিও আগে মনে করা হচ্ছিল– ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষের দুর্দশার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে নেতানিয়াহুর প্রতি তিনি কিছুটা কঠিন অবস্থান নিতে পারেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হওয়া থেকে মার্কিন অক্ষমতা এবং ইসরায়েলের প্রকাশ্যে অবাধ্যতা দেখা গেছে। ওই ঘটনার জেরে গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল, যা লেবাননে হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাকে প্ররোচিত করে। নেতানিয়াহু প্রায়ই প্রথমে কাজ করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কখনও তাঁর ক্রিয়াকলাপ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিপর্যয়কর আঞ্চলিক যুদ্ধে টেনে নেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। গত শুক্রবার লেবাননের হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনার কথা যুক্তরাষ্ট্রকে আগে থেকে জানানো হয়নি। এর গুরুতর বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। 

ইসরায়েলের এ পদ্ধতি প্রায়ই বাইডেন প্রশাসনকে এসব ঘটনার সক্রিয় অংশগ্রহণকারীর চেয়ে দর্শক হিসেবে প্রদর্শন করে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কয়েক মাস ধরে চলা সূক্ষ্ম কূটনীতির বেশির ভাগই ফাঁকা প্রতীয়মান হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। যে কোনো সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করা হলে এ জন্য ওই প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত প্রতিপত্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ক্ষমতাকে খাটো করা হয়। আগামী কয়েক মাস পরই ক্ষমতা ছাড়বেন জো বাইডেন। এ অবস্থায় তিনি উত্তরাধিকারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ যুদ্ধ রেখে যাবেন।  

মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম ইসরায়েলপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে তুলে ধরে গর্ব করেন বাইডেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটাই পরিহাসমূলক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের দ্বৈত ভূমিকায় দেখা গেছে। সিএনএনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ২ হাজার পাউন্ডের বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ঘটনা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে প্রজ্বলিত রাখবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও কূটনৈতিক লক্ষ্যের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক হবে।

তথাপি মার্কিন প্রশাসনের প্রতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত উপেক্ষার কঠোর মূল্য এসেছে। ফলে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যায়। এ বৈরিতা প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে। সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল সেড্রিক লেইটন বলেন, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের পদক্ষেপের আগে ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে কথোপকথন ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশেষ করে ওপরের স্তরের কর্মকর্তাদের। তিনি বলেন, মনে রাখার মূল বিষয় হলো– ইসরায়েল মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অভিযানের বিশদ বিবরণ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।

আরও পড়ুন

×