ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

শুভ জন্মদিন রফিকুন নবী

শুভ জন্মদিন রফিকুন নবী

.

রফি হক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:০১ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:২৯

বাংলাদেশের চিত্রকলা এক অর্থে অসীম ভাগ্যবান, কেননা এই মুহূর্তে রফিকুন নবীর মতো শিল্পীরা সৃষ্টিশীলভাবে সক্রিয় রয়েছেন। নিসর্গ প্রেম আর টোকাই– এই দুই জগৎ নিয়েই চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী পরিভ্রমণ করে চলেছেন দিনের পর দিন। শিল্পী রফিকুন নবীর প্রবীণত্ব-জাত অভিজ্ঞতা ধরা পড়ে যেমন তাঁর ব্যক্তিজীবনের প্রাত্যহিক অভ্যাস ও আচরণে, তেমনি শিল্পসাধনার ক্ষেত্রে সৃজনকল্পনা, শ্রম ও ধৈর্যের সম্মিলিত পরিচর্যায়। যে-কালে জলরং হয়ে এসেছিল চিত্রকলার মাধ্যম হিসেবে প্রায়-উপেক্ষিত, শিল্পী নবী তাকে তার সমূল্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন– কোনো মাধ্যমই তুচ্ছ নয়, যদি শিল্পীর চোখ ও আঙুলে বিদ্যুৎ ভরা থাকে।

১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিল্পী রফিকুন নবীর সাড়া জাগানো একটি জল-রঙের একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছিল ধানমন্ডির শিল্পাঙ্গন আর্ট গ্যালারিতে। আমরা তখন চারুকলার ছাত্র। সেই প্রথম আমরা তাঁর একসঙ্গে অতগুলো কাজ দেখতে পেয়েছিলাম, সেটি আমাদের জন্য ছিল এক সৌভাগ্য। প্রদর্শনী উপলক্ষে ১৩ ফেব্রুয়ারি রফিকুন নবী স্যারের একটি ইন্টারভিউ নিই। নিচে তা তুলে দিচ্ছি –

রফি হক: আজকাল তো অনেক তরুণ ও তরুণতম শিল্পীও প্রতি বছর অন্তত একটি করে একক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে আপনি এত দীর্ঘ সময় নিলেন কেন?

রফিকুন নবী: অবশ্যই তরুণদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমার ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। ছবি তো এঁকেই চলেছি। কখনও দেশের বাইরে প্রদর্শনীর জন্য পাঠাচ্ছি। কখনও দেশের গ্যালারিগুলোতেও কাজ দিচ্ছি। এ ছাড়াও ছবি আঁকবার নানান সামাজিক দায় তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে ছবি জমিয়ে রাখতে না পারার কারণে এতদিন প্রদর্শনী করে উঠতে পারিনি। 

রফি হক: আপনি যে সামাজিক দায়বোধের কথা বলেছেন, আপনার কি মনে হয় দেশের জন্য শিল্পীদের সামাজিক কর্তব্যের দায়বদ্ধতা রয়েছে?

রফিকুন নবী: কোনো দেশের সংস্কৃতির কাজ তো শিল্পীদের বাদ দিয়ে নয়।

রফি হক: আবার মূল প্রসঙ্গে আসি, প্রদর্শনীর সকল কাজই তো জলরঙে–

রফিকুন নবী: তুমি দেখেছ ছবিগুলো? কেমন লাগল?

রফি হক: জ্বী স্যার, দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে। অন্যরকম একটি অভিজ্ঞতা হলো। ওয়াটার কালারে এরকম কাজ আগে দেখেছি বলে মনে হয় না। অনেক শিল্পীর আক্ষেপ আছে যে, ওয়াটার কালার খুব অবহেলিত একটা শিল্পমাধ্যম। 

রফিকুন নবী: ছবি ভালো হলে মাধ্যমটা কোনো ফ্যাক্টর নয়। এটি খুবই একটি ভুল ধারণা। ...কখনও কখনও মাধ্যম চেঞ্জ করলে ছবিতেও এক ধরনের পরিবর্তন আসে। যেমন ধরো, আমি অনেক প্রিন্ট (উড কাট) করছি– এবার যখন ওয়াটার কালার করছি, তখন আমার প্রিন্টস-এর অনেক অনুষঙ্গ এতে যোগ হয়েছে। উড কাট-এর অনেক মোটিফ স্বচ্ছন্দে চলে এসেছে ওয়াটার কালারে। এতে করে মাধ্যমগত পারস্পরিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মাত্রা যোগ হয়। ফলে ছবিগুলোর অন্যরকম আবহ তৈরি হতে পারে।

রফি হক: হ্যাঁ, আপনার এবারের কাজে এ ব্যাপারটি কিন্তু লক্ষ্য করেছি।

রফিকুন নবী: ওয়াটার কালার পারবে। তবে দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আরেকটি জিনিস যোগ করা প্রয়োজন, সেটি মেধা।

রফি হক: এতদিন পর প্রদর্শনী করতে কেমন লাগছে?

রফিকুন নবী: নানান ঝামেলার পরও ভালো লাগছে। কারণ একটি সংশয় ছিল, সংকোচ ছিল, দ্বিধাও কাজ করছিল। ছবিগুলো এঁকে ফেলবার পর সফিউদ্দীন স্যার আর কিবরিয়া স্যারের কাছে গিয়েছি ছবির ফটোগ্রাফস নিয়ে, ওদের দেখিয়েছি এবং স্যারদের সম্মতি প্রার্থনা করেছি। স্যারেরা যখন জানিয়েছেন যে ছবিগুলো অবশ্যই প্রদর্শনীর যোগ্য তখন কিছুটা হলেও সংশয় ও সংকোচমুক্ত হয়েছি।

রফি হক: আপনার শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সত্যিই আমাকে অভিভূত করল।

রফিকুন নবী: প্রজন্মের ব্যবধানে মূল্যবোধ যতই পরিবর্তিত হোক না কেন একজন শিক্ষক সবসময়ই শ্রদ্ধেয়। একবার ছাত্র মানে চিরদিনের জন্য ছাত্র, একবার শিক্ষক মানেও চিরকালের জন্য শিক্ষক। এ সম্পর্ক যেমন স্নিগ্ধ আর পবিত্র, তেমনি মধুর। এ সম্পর্কের কোনোদিন মৃত্যু হয় না।

কত আগের সাক্ষাৎকার, আজও তা পড়তে গিয়ে থমকে যাই। তখনকার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ক, সর্বোপরি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও মূল্যবোধ– এসব মনে পড়ে চোখে জল এসে যায়।

২৮ নভেম্বর শিল্পী রফিকুন নবী স্যারের জন্মদিন ছিল। ১৯৪৩ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রশীদুন নবী, মা আনোয়ারা বেগম। 

শুভ জন্মদিন স্যার। অজস্র শুভেচ্ছা, ভালোবাসা রইল। আপনার দীর্ঘজীবন কামনা করি।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×