খুমেক হাসপাতাল
শয্যার কষ্ট প্রতিদিন ৯৫০ রোগীর

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা আছে ৫০০। রোগী ভর্তি দ্বিগুণের বেশি। ফলে অসংখ্য রোগীর ঠাঁই হয় বারান্দায়। রোববার তোলা-সমকাল
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ১৫:০৮
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে শুয়ে এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বাগেরহাটের রামপাল থেকে আসা শেখ ঈমান আলী। তাঁর ছেলে শেখ আজগর আলী অনেক চেষ্টা করেও বাবার জন্য শয্যার (বেড) ব্যবস্থা করতে পারেননি। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো শয্যা খালি নেই। পাশে বসে থাকা তাঁর বোন তাসলিমা বেগম জানান, প্রথম দু'দিন হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও ইনজেকশন দিয়েছে। এখন আর দিচ্ছে না। নার্সরা বলেছেন, সরবরাহ কম, কোথা থেকে দেব?
যশোরের নওয়াপাড়া থেকে তিন দিন আগে এসে ভর্তি হন শামীম শেখ। মেঝেতে অসুস্থ শামীম শেখের পাশে বসে তাঁর স্ত্রী জুলি বেগম বলেন, শয্যা পাইনি, তাই মেঝেতেই রাখতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে দু-একটি ওষুধ পেয়েছি। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়েছে। মেঝেতে থাকায় লোকজন হেঁটে গেলে ধুলাবালি উড়ে তাঁর স্বামীর নাকেমুখে যাচ্ছে।
শুধু এই দু'জনই নন, খুমেক হাসপাতালে তাঁদের মতো অতিরিক্ত প্রায় ৯৫০ রোগী প্রতিদিন অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি। গতকাল রোববার ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৪৫২ রোগী। অতিরিক্ত রোগীদের ঠিকমতো মেলে না ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। অপারেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন।
রোববার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ডের পাঁচটি ইউনিটের বারান্দা ও সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে অসংখ্য রোগী। ২, ৩ ও ৪ তলায় লিফটের সামনে, ব্লাড ব্যাংকের সামনের বারান্দা, চিকিৎসকদের কক্ষের সামনের মেঝেতেও শুয়ে আছেন অসংখ্য রোগী। বারান্দাগুলোর দু'পাশে মেঝেতে কাঁথা কিংবা মাদুরের ওপরও রোগী। মাঝখানের এক-দেড় ফুট খালি জায়গা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন রোগীর আত্মীয়স্বজন ও হাসপাতালের লোকজন। আর ধুলা উড়ে রোগীদের নাক, মুখ, চোখ ও খাবারের মধ্যে যাচ্ছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে অপেক্ষমাণ খুলনার রূপসা থেকে আসা রোগী মরিয়ম বেগম বলেন, গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে তাঁর পেটে ব্যথা হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। টিকিট কেটে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, কিন্তু এখনও তাঁর সিরিয়াল আসেনি।
খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা রোগী বারীন বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তার দুটি টেস্ট করতে বলেছিলেন, একটি টেস্ট এখান থেকে করেছি। বাইরের ক্লিনিক থেকে আরেকটি টেস্ট করাতে ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা দুই রোগী জানান, দিনে মাত্র একবার ডাক্তার দেখতে আসেন। জরুরি প্রয়োজনে ডাকলে ইন্টার্ন চিকিৎসক বা নার্স আসেন। ডাকলে তাঁরাও বিরক্ত হন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ সমকালকে বলেন, শয্যাসংখ্যা কম থাকায় বাধ্য হয়েই অনেক রোগীকে মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ১৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি পূরণ হচ্ছে না। চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ এবং ওষুধসহ অন্যান্য বরাদ্দ জরুরি।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫০০ শয্যা অনুযায়ী হাসপাতালের জনবল কাঠামো। তার ওপর চিকিৎসকের ২৮৮টি পদের মধ্যে ৯২টি পদ খালি। অন্যান্য পদ শূন্য রয়েছে ৪৩টি। জনবল সংকটের মধ্যে এত বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে তাঁরা হাঁপিয়ে উঠছেন। দুটি অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন টেবিল রয়েছে আটটি।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান সমকালকে বলেন, ভর্তি সব রোগীকে হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ৫০০ শয্যার জন্য বরাদ্দ ওষুধ বাধ্য হয়ে দেড় হাজার রোগীকে দিতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল নেই। চিকিৎসকদের দেখতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। আরও ১ হাজার ৬৮টি শয্যা বৃদ্ধির প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ভর্তি থাকা প্রায় ১ হাজার ৪০০ রোগীর পাশাপাশি প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে প্রায় ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
- বিষয় :
- খুলনা
- খুমেক
- খুলনা মেডিকেল কলেজ