ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

কচুরিপানার দখলে মেঘনা, নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

কচুরিপানার দখলে মেঘনা, নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

নরসিংদীর মেঘনা নদীতে কচুরিপানায় আটকে আছে নৌযান/ সমকাল

নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৭:১৮

নরসিংদীর মেঘনা নদী কচুরিপানার দখলে। এ কারণে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নরসিংদী শহরের সঙ্গে সদর ও রায়পুরা উপজেলার ১২টি চর ইউনিয়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। মেঘনা নদীর এমন বেহাল অবস্থায় সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চরাঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা। দ্রুত কচুরিপানা অপসারণ করে নৌপথ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদীর করিমপুর থেকে থানাঘাট ও স্লুইসগেট এলাকা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীপথ দখল করে নিয়েছে কচুরিপানা। এতে নরসিংদী শহরের সঙ্গে সদর উপজেলার চারটি এবং রায়পুরার আটটি চরাঞ্চল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দু-একটি ইঞ্জিনচালিত নৌযান মাঝেমধ্যে চলতে দেখা গেলেও সেগুলো কিছু দূর যেতে না যেতেই ঘন কচুরিপানার স্তূপে আটকা পড়ছে। শুধু তাই নয়, অনেক কষ্টে এই ঘন কচুরিপানার স্তূপ ঠেলে নরসিংদী এলেও ঘাটে ভিড়তে পারে না। কচুরিপানা আধিক্যের কারণে মাঝ নদীতেই নোঙর ফেলতে দেখা যায়। সেখান থেকে দীর্ঘ বাঁশের মাঁচায় চড়ে পায়ে হেঁটে ঘাটে উঠতে হয় চরবাসীর।

ভুক্তভোগীরা জানান, চরবাসীর নিত্যপণ্য, ওষুধ, কাঁচামালের সিংহ ভাগ আসে নরসিংদী থেকে। মাসখানেক সময় ধরে নৌকাযোগে এসব বহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। নদীজুড়ে কচুরিপানা থাকায় লঞ্চ, স্টিমার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ইতোমধ্যে নরসিংদীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী কয়েকশ স্পিডবোট বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় লোকজন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। আগে যে স্থানে যেতে সময় লাগতো এক ঘণ্টা, এখন সেখানে লাগছে তিন-চার ঘণ্টারও বেশি।

জানা গেছে, ভাসমান এসব কচুরিপানার উৎস অবৈধ মাছের ঘের। ঘের থেকে কচুরিপানা বাতাসে ভেসে এসে জমা হয় নরসিংদী নদীবন্দরসহ আশপাশের এলাকায়। এবারই প্রথম নয়, প্রতি বছরই এই সময়ে নরসিংদীর মেঘনা নদী দখল করে নেয় কচুরিপানা।

ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি কুডু মিয়া বলেন, কচুরিপানার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, প্রায় এক মাস ধরে নরসিংদী যেতে পারি না। অর্ধেক পথে যাত্রী নামিয়ে দিতে হয়। বেশ কিছু দিন ধরে বুদিয়ামারা মোড় এলাকা থেকে নাগরিয়াকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে নৌকা চলাচল প্রায় বন্ধ। দু-একটি নৌকা কষ্ট করে নরসিংদী পর্যন্ত গেলেও ঘাটে ভিড়ানো সম্ভব হয় না। মাঝ নদীতে যাত্রী নামাতে হয়।

রমজান মিয়া নামে এক মাঝি জানান, কচুরিপানার কারণে ঠিকভাবে নৌকা চালাতে পারেন না তাঁরা। একটু পরপরই ভাসমান কচুরিপানার স্তূপে আটকে যায় নৌকা। এ সময় লগি বৈঠা দিয়ে আটকে যাওয়া নৌকাকে মুক্ত করতে হয়। তা ছাড়া কচুরিপানার কারণে স্বাভাবিক গতিতে নৌকা চালাতে পারেন না তাঁরা। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি সময় লেগে যায়।

স্পিডবোট চালক ইদন মিয়া বলেন, নদীতে কচুরিপানা এতটাই বেড়েছে যে, বোট চালানো বন্ধ হয়ে গেছে। দু-চারজন পেটের তাগিদে স্পিডবোট চালালেও করিমপুর থেকে যাত্রী ওঠানামা করতে হয়। নরসিংদী আর যাওয়া সম্ভব হয় না।

নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তীর ভাষ্য, নদীতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাছের ঘের থেকে এই কচুরিপানা ভেসে আসে। এজন্য অবৈধ দখলদার ও অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×