কয়েক দিন ধরে ১০/১২ টি লাল হনুমানের একটি দল শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। এলাকার মানুষের ফলানো শাক সবজি, ফলমূল খেয়ে উজার করে ফেলছিল, কখনো মানুষের ঘরে ঢুকে খাবার সামগ্রীসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র নষ্ট করে যাচ্ছিল। 

এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হনুমান দলকে যে যেভাবে পারছে তাদের আক্রমণ করে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছিল। কেউ ঢিল ছোঁড়ে কেউ বা লাঠিসোটা দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। এতে এলাকাবাসীর আক্রমণে হনুমানগুলোর জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের সদস্যরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইকিং করে হনুমান দলকে রক্ষায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের পশ্চিম লইয়ারকুল গ্রামটি গাছগাছালিতে ঘেরা। এই গ্রামে ১০-১২ টি হনুমান একগাছ থেকে অন্যগাছে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল। কোন কোন হনুমান তেঁতুল গাছে বসে তেঁতুল খাচ্ছে। শিমগাছের শিম খাচ্ছে। গ্রামবাসী ফসলাদি রক্ষায় লাঠি, গুলতি ইত্যাদি নিয়ে বার বার তাদের তাড়া করছে। কিন্তু কিছুতেই তাদের দমানো যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীর আক্রমণে হনুমানগুলোর জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়।

এ খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা এলাকাবাসী যাতে প্রাণীগুলোর উপর কোন ধরনের হামলা না করে বা তাদের বিরক্ত না করেন সে জন্য মাইকিং করে এলাকার লোকজনের সচেতনতা সৃষ্টি করেন। বন্যপ্রাণী জাতীয় সম্পদ এ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব এমন সব কথায় জনগণকে র‌্যাব সদস্যরা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয় মসজিদের মাইকে এ ধরণের প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব দেওয়া হয় হনুমানদের যেন মারা না হয়। এই কথা জানিয়েছেন র‍্যাব ৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম।

শ্রীমঙ্গল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) মোনায়েম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এই এলাকায় হনুমান থাকার কথা নয়। তিনি ধারণা করছেন কোথাও থেকে এই প্রাণীগুলো কলা বা অন্য কোন ফলের গাড়িতে করে চলে আসতে পারে। এখানে পুরো একটি পরিবার চলে এসেছে। বিষয়টি জানার পর এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে হনুমান রক্ষা ও এলাকার মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান,  এ এলাকায় প্রচুর গাছ ও বাঁশ থাকায় হনুমানগুলো মনের আনন্দে খেলছে। এদের গায়ের রঙ সোনালী মুখ কালো এদেরকে লাল হনুমান বলা হয়। গাছের মগডালে থাকায় তাদের ধরা যায়নি। হনুমান মানুষ কে আক্রমণ করে না। তবে এই এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনের স্পর্শে প্রাণীগুলোর প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ থাকায় যেকোনো সময় প্রাণীগুলোর উপর হামলা হতে পারে। 

এ অবস্থায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগকে ত্বড়িত উদ্যোগ গ্রহণ করে এই সব প্রাণীকে অরণ্যা লে নেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। তিনি আরও জানান, বনে খাবার সংকটের কারনে হনুমানের দল লোকালোয়ে চলে আসতে পারে।