আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের সময় নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যদিও এই কর্মসূচিকে পাল্টা কর্মসূচি বলতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এটাকে দলের স্বাভাবিক কর্মসূচি বলে দাবি তাদের।

নোয়াখালীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলার চাটখিল, সোনাইমুড়ী, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, কবিরহাট ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে হামলার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চাটখিল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু হানিফ অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে চাটখিল উপজেলার সাহাপুর বাজারে, হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের বিনাতলা এলাকায় ও পরকোর্ট ইউনিয়নের দশঘরিয়া বাজারের পদযাত্রায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তফা কামাল (৬০) সাহাপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বাবুল (৬০) জামাল হোসেন (৫০) যুবদল নেতা রুবেল হোসেন (২৮) আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সেলিম শাহী জানিয়েছেন, সোনাপুর ইউনিয়নের খেলাফত বাজারে পদযাত্রা শুরু হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ফিরোজ, মাসুদ, সালা উদ্দিন ও সৈকতসহ ১০ জন আহত হন। পরে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকর্মী যুবদল নেতা ফিরোজের বাবার দোকানে হামলা ও লুটপাট চালান।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের কানকিরহাট বাজারে পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন এসব হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। 

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শহীদ উল্যাহ খান সোহেল জানিয়েছেন, উস্কানিমূলক কার্যক্রম চালানোয় সেখানে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ফেনীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

ফেনী জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে ফেনীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাদের দাবি, জেলায় কমপক্ষে দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে শুক্রবার রাতে হামলা চালানো হয়। ফুলগাজীতে হামলা চালিয়ে ৭ জনকে আহত করা হয়। হামলার সময় লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

জেলা বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,  শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সদর থানার শর্শদীতে যুবদল নেতা মানিকের খামারে অগ্নিসংযোগ করে, বাড়িতে গুলি চালানো হয়। এ সময় প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, শুক্রবার রাতে জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক জহির চৌধুরীর বাড়িতে হামলা, তাঁতী দলের সদস্যসচিব ইয়াছিন বাবুর বাড়ি ভাঙচুর, যুবদল নেতা জাফর মানিক, জিয়া উদ্দিন ও যুবদল নেতা ইমনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

শনিবার সকালে ফুলগাজীতে বিএনপির একটি মিছিলে যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। এতে বিএনপির সাত নেতাকর্মী আহত হন। 

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ হামলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এসব হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয়। এসব হামলার সঙ্গে স্থানীয় লোকজন জড়িত থাকতে পারে।

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ার হাট বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল বাঙালি, আওয়ামী লীগ নেতা মহিব উল্যা শিপন, ছাত্রলীগ নেতা শুভ ও রাকিব এবং ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আকরাম হোসেন সাহেদ, ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ উল্যা রাজু, হেলাল, আনেয়ার, আরজু, যুবদল নেতা দুলাল হাওলাদার, মানিকসহ ১২ জন আহত হন।