ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা - সমকাল

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৩৩ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৩৩

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শামীম সিদ্দিকী নামে এক শিক্ষার্থীর জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভাগের শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসান। এমন প্রশ্নে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থী শামীম সিদ্দিকী ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে তিনি বলেন, 'আমার জীবনের শেষদিনে কিছু কথা বলব, বলাটা জরুরি। আমার বিভাগের শিক্ষক শেখ মেহেদী হাসান স্যার আমাকে আমার সহপাঠীদের সামনে, আমার জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। কোনো এক অজানা কারণে স্যার আমাকে অপছন্দ করেন না, কী কারণে পছন্দ করেন না তা আমি জানি না। হয়তো বা আমি তার পছন্দের দল করি না, এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। বিভিন্ন সময় ক্লাসে আমাকে কারণে অকারণে অপমান অপদস্ত করেন। আমি এগুলো শাসন হিসেবে মেনে নিয়েছি, কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু আজ সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছেন। আজ আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেখানোর কথা ছিল স্যারকে। আমি সহপাঠীদের নিয়ে স্যারের অফিসে যাই। প্রথমে রুমে আমি প্রবেশ করি। স্যার আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি তো লিডার, তুমি আগে আসছ কেন। আগে অন্যরা আসবে, সবার শেষে আসবে তুমি। উত্তরে আমি বললাম, ওরা ভয় পাচ্ছে তাই আমি আগে আসছি। এরপর তিনি আমাকে কিছু পরামর্শ দিলেন। আমি শুনলাম। তিনি বললেন, তুমি তো রাজনীতি করো, যে দলের রাজনীতি করো; আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ তোমাকে কিচ্ছু দেবে না। শেষমেশ কী হবে, ডিপার্টমেন্টে তোমার রেজাল্ট ফল করবে। ওখান থেকে তুমি কিচ্ছু করতে পারবা না। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা কী করেন। আমি বললাম, শিক্ষকতা করেন কলেজে। জানতে চাইলেন, পদবি কী। আমি সেটা না বলতে পারায়, তিনি বললেন, তুমি তোমার বাবার কেমন ছেলে? জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবার বয়স কত, বললাম ৪৫ হবে, তোমার বয়স কত, বললাম ২২। এরপর তিনি এ নিয়ে বিশ্নেষণ শুরু করলেন। তিনি বললেন, চাকরি নেওয়ার পর উনি বিয়ে করলে, হিসাব তো মেলে না। তাহলে তুমি কবে হইছো?'

এমন প্রশ্ন মেনে না নিতে পেরে, কষ্টের কথাগুলো সবাইকে জানাতে ফেসবুক লাইভে এসে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষার্থী। লাইভ দেখে, সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপ ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে ছুটে যান ছাত্রবিষয়ক পরামর্শক ড. তপন কুমার সরকার।

এদিকে ঘটনাটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসানের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা মোড় চত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থী। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল।

ড. শেখ মেহেদী হাসান দাবি করেন, আসলে জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। সাধারণ আলাপচারিতায় এমন কথা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইমদাদুল হুদা বলেন, আগে ওই শিক্ষার্থী সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর আলোচনা ও তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান জানান, শিক্ষার্থী শামীমের চিকিৎসা চলছে। সে শঙ্কামুক্ত।

আরও পড়ুন

×