ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

ইমরান খান পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল: সি এম শফি

ইমরান খান পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল: সি এম শফি

ছায়া সংসদে ট্রফি হাতে বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের সঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সি এম শফি সামি ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সহ বিচারকরা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২২ | ০৪:২৪ | আপডেট: ১৪ মে ২০২২ | ০৪:২৫

‘পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থাকলেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান সরকারের বিরোধ, শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিজ জোটের অনৈক্যই অনেকাংশে দায়ী। তবে প্রথমবারের মতো সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট শক্ত সাংবিধানিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। নবগঠিত শাহবাজ সরকারের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। পিএমএলএন ও পিপিপি এই দুটি প্রভাবশালী জোটের বর্তমান ঐক্য কতদিন থাকবে তা দেখার বিষয়। বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনার সক্ষমতা ও জোটবদ্ধতার স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করছে ইমরান খানের ভবিষ্যত রাজনীতির সাফল্য। তবে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং তিনি মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাব থাকলেও তা কাউকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা বা ক্ষমতাচ্যুত করার মতো নয়।’ শনিবার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত পাকিস্তানের ইমরান খানের সরকার পতনের কারণ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সি এম শফি সামি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় লজ্জার বিষয় হচ্ছে, তাদের সরকারগুলোর গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে যত ভালোই হোক না কেন, সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে না। পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে ২৫ বছরই সামরিক বাহিনীর শাসন ছিল। বাকি ৫০ বছর বেসামারিক সরকারে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে সামরিক বাহিনী। আসলে পাকিস্তানের গণতন্ত্র কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। অদৃশ্য ক্র্যাচের উপর নির্ভর করে পাকিস্তানের সরকার পরিচালিত হচ্ছে। যখনই এই ক্র্যাচটি সরিয়ে নেওয়া হয় তখনই পাকিস্তানের গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বরাবরই পাকিস্তান দেশীয় অদৃশ্য শক্তি ও বিদেশি চক্রান্তের শিকার হওয়ায় দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তবে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করছে।’

কিরণ আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বদলে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে ইমরান খান ক্ষমতায় আসলেও তেমন কোন পরিবর্তন দেখাতে পারেননি তিনি। তার আমলে মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। পাকিস্তানের এই মুহূর্তে দেনার পরিমাণ প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার। বলা হয় পাকিস্তানের অন্য সময়ের চেয়ে ইমরানের মন্ত্রীসভা সবচেয়ে দুর্বল ছিল। মিডিয়াকে কণ্ঠরোধ করাসহ বিরোধী রাজনীতিবিদ দমন নিপীড়ন করার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। তার সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে বারবারই শাহবাজ, মরিয়ম, বিলওয়ালকে গ্রেপ্তার করায় এরা সবাই ইমরান বিরোধী কার্যক্রমে ঐক্যবদ্ধ হয়। সর্বশেষ দেখা গেছে আইএসআইয়ের প্রধান পদে সেনাপ্রধানের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ না দেওয়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান সরকারের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। যা বিরোধীরা ইমরানকে অপসারণে কাজে লাগায়। তবে ইমরান নিজেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি ইসলামাবাদে এক জনসভায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাকে দেওয়া কূটনৈতিক সতর্কবার্তার একটি চিঠিও প্রদর্শন করেন। 

সি এম শফি সামি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা এখনও শ্রীলঙ্কার মতো হয়নি। তবে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা থেকে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষনীয় রয়েছে। তাই বাংলাদেশে দ্বন্দ্ব সংঘাতমূলক পরিস্থিতি পরিহার করে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসা জরুরি।’

ইউসিবি পাবলিক পাবলিক শিরোনামে এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন ও সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

আরও পড়ুন

×