ঢাকা বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

চলছে সংস্কারকাজ

মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নকশায় বড় পরিবর্তন

মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নকশায় বড় পরিবর্তন

ফাইল ছবি

অমিতোষ পাল

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:০৯ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৭:২৮

দীর্ঘ ৫৪ বছর পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নকশায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তেমনি সংযোজন হচ্ছে পাঠাগার, বিশ্রামাগার ও বিশেষ অতিথিদের জন্য কমপ্লেক্স। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মূল বেদির সঙ্গে উদ্বোধক হিসেবে নাম ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটা থাকবে কিনা– তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পট পরিবর্তনের পর গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল ওই অংশটি। এ জন্যই সন্দেহের ডালপালা মেলেছে। 

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, এক্সক্যাভেটর দিয়ে বেদির দক্ষিণ পাশের মাটি খনন করে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন তৈরির কাজ চলছে। আর পুরো বেদিটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। নতুন নকশা অনুসারে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। বেদির ইট-পাথর খোলার কাজ চলছে জোরেশোরে। প্রকল্পের আওতায় একটি দোতলা মাল্টিপারপাস ভবন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, মূল স্মৃতিসৌধের জরাজীর্ণ ইটের গাঁথুনি এবং টাইলসের পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ করা হবে।

স্মৃতিসৌধে কালো রঙের পাথরের মূল বেদির ওপর শ্বেতপাথরে খোদাই করে কালো রঙে লেখা, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,/ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।’ আরেকাংশে লেখা, ‘বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধের ফলক উন্মোচন করেন জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ই পৌষ ১৩৭১ বাং, ২২ ডিসেম্বর ১৯৭২ ইং।’

নতুন কমপ্লেক্সের নকশা প্রণেতা স্থপতি ইকবাল হাবিব সমকালকে বলেন, এই অংশের লেখাগুলোও ঠিক আছে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার কী করবে, সেটা বলতে পারব না। কিন্তু উচ্চতা বাড়ানো ছাড়া মূল বেদিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

তিনি জানান, আগের বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে হলে কয়েকটি ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হতো। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের এই সিঁড়ি মাড়াতে বেগ পেতে হতো। এ জন্য বিগত সরকারের আমলে এক বৈঠকে আমাকে নতুন নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন নকশায় বেদিটি একটু নিচের দিকে স্থাপন করা হয়েছে। আর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন, সে জন্য একটি ঢালু সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে।

নকশার পরিবর্তন সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, কবরস্থান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আলোকবাতি সংযোজনের বিষয়টি ডিএনসিসি দেখাশোনা করে। পুরোনো দেয়াল ও পানি নিষ্কাশনের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। মূল স্মৃতিস্তম্ভের কাজ দেখভাল করছে গণপূর্ত বিভাগ। 

গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, নতুন নকশায় কী আছে সেটা আমরা জানি না। আমাদের দায়িত্ব নকশা অনুযায়ী তৈরি করে দেওয়া। সেটাই করে দিচ্ছি। কিন্তু সেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকবে কিনা বলতে পারছি না। 

স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আসিফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ইকবাল হাবিবের দেওয়া নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন ছিল। এমনকি মূল বেদিতেও বড় পরিবর্তন ছিল। তখন স্থাপত্য অধিদপ্তর আপত্তি দেয়– মূল বেদিতে যেন কোনো পরিবর্তন করা না হয়। 

এ প্রসঙ্গে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বিশেষ অতিথিদের কমপ্লেক্সে প্রবেশের জন্য পৃথক একটি প্রবেশপথ ও তাদের জন্য একটি বিশ্রামাগার রাখা হয়েছে। একটি পাঠাগার থাকবে, যেখানে শহীদ বুদ্ধজীবীদের বইপত্র, লেখা– এগুলো সংরক্ষিত থাকবে। 

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। দক্ষিণ পাশের অংশটি প্রখ্যাতজনদের জন্য সংরক্ষিত এবং উত্তরের বড় অংশটি সাধারণের কবরস্থান। এই উত্তর-দক্ষিণের মাঝখানের অংশে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ। আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ কাজের বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুশল নির্মাতা লিমিটেডের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

×