ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

ভঙ্গুর দেশকে পুনর্গঠন করতে পারবে বিদ্রোহীরা?

ইদলিব থেকে আনা হয়েছে পুলিশ

ভঙ্গুর দেশকে পুনর্গঠন করতে পারবে বিদ্রোহীরা?

ছবি: দ্য নিউ আরব

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৬ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৭

স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে হটিয়ে গত রোববার পুরো সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসলামপন্থি দল হায়াত তাহরির-আল-শাম (এইচটিএস)। এখন তাদের সামনে সবচেয়ে বড় কাজ সিরিয়ায় আইনের শাসন ফেরানো এবং দেশকে পুনর্গঠিত করা। সুন্নি ইসলামপন্থি এই দলটি আগে থেকেই তুরস্ক সীমান্তবর্তী অঞ্চল ইদলিবে সরকার পরিচালনা করছে। সেখানকার সরকারপ্রধান মোহাম্মদ আল বশিরকেই পুরো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছে তারা। বিদ্রোহীরা সিরিয়াকে এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠিত করতে চাচ্ছে।

তবে এ জন্য আগে এইচটিএসকে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে আরও যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে, তাদের এক করতে হবে। দলটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্টে আশ্বস্ত করেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তারা কোনো ধরনের অত্যাচার চালাবে না। আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর পুলিশ বাহিনী রাজধানী দামেস্ক থেকে উধাও হয়ে গেছে। এখন দামেস্কে যেসব পুলিশকে দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই ইদলিব থেকে এসেছে। তাদের পোশাকে ইসলামের বিভিন্ন চিহ্ন রয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা প্রথমে আলেপ্পো দখল করেছিল। সেখানকার পরিস্থিতি ইতোমধ্যে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। আলেপ্পোর সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরেছেন। ধীরে ধীরে দামেস্কেও আইন ও শাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে তারা। এ জন্য আসাদ সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রীকে এখনও স্বপদে বহাল রেখে কর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে বিদ্রোহীরা। পুলিশ বাহিনীকেও কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য ইদলিব থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আসছে বিদ্রোহীরা। ইসলামিক অনুশাসনে পরিচালিত ইদলিবের এসব কর্মী রাজধানী দামেস্ককে কীভাবে পরিচালনা করবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাশার আল-আসাদ পালানোর পরপরই সিরিয়াজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল, যা গতকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে লাটাকিয়া ও তার্তুসের অস্ত্রাগারগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সঙ্গে গোলান মালভূমিতেও সিরীয় অঞ্চল দখল অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। এসবের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিরিয়া আবারও বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে তুরস্কসমর্থিত বিদ্রোহী ও কুর্দিদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। নতুন এ সংঘাতে সেখানে এক লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে স্বৈরশাসক আসাদের কুখ্যাতি ছিল তাঁর তৈরি ভয়ংকর কারাগারগুলো নিয়ে। সেখানে বিরোধী মতের মানুষকে বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। তাদের ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। বিদ্রোহীদের কমান্ডার আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাশার আল-আসাদের তৈরি সব কারাগার বন্ধ করে দেবেন তিনি। এ ছাড়া বাশার যেসব নিরাপত্তা বাহিনী গড়েছিলেন, সেগুলোও বিলুপ্ত করা হবে। 

নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল বশির আলজাজিরাকে বলেছেন, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতে আসাদকে যেসব সামরিক কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন এবং তাঁর যেসব সহযোগী ছিল, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদের সমাধি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিদ্রোহীরা। লাটাকিয়ার ওই সমাধিতে আসাদের বাবা ছাড়াও মা ও ভাইয়ের কবর আছে। হাফিজ আল-আসাদ ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই বছর তাঁর মৃত্যু হলে প্রেসিডেন্ট হন বাশার। সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো উদারতার সঙ্গে সিরিয়াকে শাসন করবেন। তবে এর বদলে ভিন্নমতের ওপর তিনি চালিয়েছেন ইতিহাসের ভয়াবহ নৃশংস নির্যাতন।

আরও পড়ুন

×