ঢাকা রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাশার আল-আসাদের পতন

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না বিদ্রোহীরা

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না বিদ্রোহীরা

ছবি: মিডল ইস্ট আই

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০:১৪

বিদ্রোহী দল হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মুহাম্মদ জুলানি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তারা কোনো যুদ্ধে জড়াবেন না। যদিও ইসরায়েল তাদের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ইরানি যোদ্ধারা আছে– এমন অজুহাতে ইসরায়েল সিরিয়ায় প্রায়ই হামলা চালাত। কিন্তু এখন ইরানিরা নেই। তাই ইসরায়েলেরও হামলা চালানো বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরিয়াকে এ মুহূর্তে পুনর্গঠন এবং নতুন কোনো দ্বন্দ্বে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই বলেও আশ্বস্ত করেছেন এই বিদ্রোহী নেতা।  

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো সব পরাশক্তি বলেছে, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় এবং এটিকে সম্মান দেখাতে হবে। 

এমনকি আসাদের পতনের পর সিরিয়াজুড়ে নির্বিচার বিমান হামলা চালানো দখলদার ইসরায়েলও বলেছে, তারা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না। তবে এই দেশগুলো ক্ষুধার্থ নেকড়ের মতো ভঙ্গুর দেশটির দিকে নজর রাখছে। যদি বিষয়টি আমলে না নেওয়া হয়, তারা সিরিয়াকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের সহকারী সম্পাদক সিমন টিসডাল এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এ ছাড়া সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সিরীয়দেরই সুযোগ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সিমন বলেছেন, সিরিয়ার শাসন পরিচালনার জন্য ইসলামপন্থি দলটি হয়তো ভালো ‘চয়েজ’ নয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছর দেশটিতে ব্যর্থ হওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও কোনো সহযোগিতা চায়নি দলটি। বাশার আল-আসাদের পতন তারাই ঘটিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমারা গৃহযুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছে। 

রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি এবং ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার চেয়েছে, ইরানের মিলিশিয়া বাহিনী সিরিয়াকে গাজা এবং লেবাননের যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহের রুট বানিয়েছে, তুরস্ক কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে থামাতে গেছে। এতে করে দেশটির গৃহযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়েছে। কিন্তু এবার আর তাদের একই ভুল করা উচিত হবে না। 

গৃহযুদ্ধে দুর্বল হয়ে যাওয়া আসাদকে নিয়ে ইসরায়েল চিন্তিত ছিল না। তাঁর শাসনামলে সিরিয়ায় ইরানসমর্থিত যোদ্ধা ও তাদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাত ইসরায়েল। তবে আসাদের পতনের পর হঠাৎ করে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তায় পড়ার দাবি করছে তারা। এর অংশ হিসেবে সিরিয়ায় ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে দখলদাররা। এ ছাড়া সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাকি অংশও দখল করেছে তারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা চান না। তবে সিরিয়ায় বোমা হামলা ও গোলান মালভূমি দখল করে সেই অপ্রত্যাশিত শত্রুতাকেই তিনি ডেকে আনছেন বলে মন্তব্য করেছেন গার্ডিয়ানের এই সাংবাদিক। 

সিরিয়ায় এখন নিজেদের ঘাঁটি অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করছে রাশিয়া। এর অংশ হিসেবে দেশটিকে পুনর্গঠনে সহায়তার প্রস্তাব দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্যদিকে, গোপনে সিরিয়া হয়ে লেবানন ও গাজায় অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবে ইরান। আর যুক্তরাষ্ট্র আইএসআইএসকে প্রতিহত করতে সেখানে অবস্থান ধরে রাখতে পারে। অপরদিকে তুরস্ক সীমান্তের অপর প্রান্তে কুর্দিদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে। যেন কুর্দিরা তাদের জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে।

এদিকে বাশারের পতনের পর সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি ও সেনাদের অবস্থান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে চারটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনারা সম্মুখভাগ থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ঘাঁটি সেখানে থাকবে। 

আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো হায়াত তাহরির আল-শামকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করলেও তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত শনিবার এই তথ্য জানান। তবে এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি। 

সরকার পরিবর্তনের পর সিরিয়ায় অব্যাহতভাবে হামলা চালানো ইসরায়েল গতকাল রোববারও দেশটিতে বোমা ফেলেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। তবে দক্ষিণাঞ্চলের কুনেইত্রা শহরের রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের স্থল সেনারা। আরব দেশগুলো ইসরায়েলের ভূমি দখল ও হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা থামছে না। 

আরও পড়ুন

×