বহিষ্কৃত স্থানীয় নেতাদের দলে ফেরাচ্ছে বিএনপি

কামরুল হাসান
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ২২:২০
বিএনপিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত স্থানীয় নেতাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু দলের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং গুরুতর অভিযোগে বহিষ্কৃতদের বাদ দিয়ে সবাইকে দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৮০ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাদের দলে সক্রিয় করা হয়েছে। আরও শতাধিক নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে গত বছর বহিষ্কৃত ছাত্রদলের ১৬ নেতার বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য, সংঘর্ষ কিংবা নিষ্ফ্ক্রিয়তার অভিযোগে সারাদেশে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। তবে দলের হাইকমান্ড এখন এ ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরাও তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার আবেদন করেছেন। এতে সায় দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দলের আদর্শবিরুদ্ধ কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে হাইকমান্ড। তাদের দলে না ফেরানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে দলে।
যাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে: সূত্র জানায়, অনেক নেতাকে ইতোমধ্যে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারা হলেন বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জিং সম লিয়াম বম, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি শিরিনা আক্তার, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা মহিলা দলের নেত্রী শাহনাজ বেগম, ফটিকছড়ি উপজেলার সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কোরাইশী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনিসুল হক, নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এসএম আহসান হাবিব, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার সাবেক সদস্য মাহফুজা খাতুন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাবেক সদস্য হাসিনা বেগম, মোবারক আলী মুন্সি, শহীদুল ইসলাম এবং মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল আলিম খান মনোয়ার।
এ তালিকায় আরও আছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান শোয়েব, রাজশাহীর চারঘাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কায়েম উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের দক্ষিণখান মহিলা দলের সভাপতি জাকিয়া সুলতানা পান্না, সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম ডালিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশীদ আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি লুৎফুল হক খোকন, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম স্বপন, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য জয়নাল আবেদীন, সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি সোহেল আহমদ চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি নেতা মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য আহমদ নুর উদ্দিন।
এ ছাড়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন রুবেল, সিলেট জেলা মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজমা বেগম, বিশ্বনাথ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ইয়াসমিন, সিলেট জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি স্বপ্না শাহীন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য ওয়াহিদুজ্জামান সুফী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা মহিলা দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী ইকবাল, সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদাল মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী প্রমুখ।
যাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার প্রক্রিয়াধীন: এ তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সম্পাদক সেলিনা হাফিজ, যাত্রাবাড়ী মহিলা দলের সহসভাপতি হোসনে আরা হেনা, আদাবর থানা মহিলা দলের সহসভাপতি আরমিন আক্তার, কামরাঙ্গীরচর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সেতারা বেগম। তাদের মতো দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদেরও দলে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। একই সঙ্গে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন কেন্দ্র করে বহিষ্কৃত ১৮ নেতাকর্মীকেও দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঝুলে আছেন ছাত্রদলের ১৬ নেতা: সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও এখনও নির্ধারিত হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ১৬ নেতার ভাগ্য। ছাত্রদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গত বছর তাদের বহিষ্কার করা হয়। তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আশ্বাস দিলেও তাদের ব্যাপারে কোনো সুরাহা করেননি। ফলে দলের অন্য অঙ্গ সংগঠনে এই নেতাদের পদায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার রহমান কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজীদ আরেফিন, সহসাংগঠনিক দবির উদ্দিন তুষার, গোলাম আজম সৈকত, আবদুল মালেক, সদস্য আজিম পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাসার সিদ্দিকী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন। এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাদিয়া পাঠান পাপন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি এইচএম রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল ইসলাম জিসানকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল। তাদের বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হয়নি। এতে ছাত্রদলের চলমান কমিটিতে তাদের পদায়নও করা যাচ্ছে না।
বিএনপি নেতারা জানান, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিষয়ে দেখভাল করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাই তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্য কারও নেই। এবার সাবেক এসব ছাত্রনেতার বিষয়ে দলের হাইকমান্ড ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, বহিষ্কৃতদের বিষয়ে সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান তাদের কোনো নির্দেশনা দেননি। তাই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সমকালকে বলেন, দলে বিভিন্ন কারণে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু পরে তাদের আবেদন কিংবা ইউনিট কমিটির সুপারিশে শাস্তি প্রত্যাহারও করা হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।
- বিষয় :
- বিএনপি
- বহিষ্কৃত
- বহিষ্কৃত নেতা