ঢাকা রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

ওরস বন্ধ, তবু মেলেনি নিস্তার

কথিত মুসল্লিদের ভেঙে দেওয়া মাজার। শুক্রবার ধামরাইয়ের অর্জুনালাই গ্রাম থেকে তোলা ছবি সমকাল

 ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫৫

ঢাকার ধামরাইয়ে মাইকিং করে লোক জড়ো করার পর একটি মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুনালাই গ্রামে অবস্থিত প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের মাজারে ঘটে এ ঘটনা। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই ফকিরের ছেলে আক্কাস আলী বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেছেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৭০০-৮০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। 
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাজারটিতে শুকুর আলী ফকিরের ৬৬তম ওরসের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকেই ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের ব্যানারে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত অর্জুনালাই জামে মসজিদে সমবেত হন।
মুসল্লিরা ওই মাজারে ওরস ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি তোলে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই ধামরাই থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসেন। তারা রাত ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওরসের আয়োজন বন্ধ করতে বলেন। মাজারের লোকজন তখন ওরস বন্ধ করে দেন। এর পরও মুসল্লিরা ওরস আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা রাখার দাবি জানাতে থাকেন। এতে সায় দেননি পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা মাজারটি চিরতরে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার কথা জানান। পরে তারা মসজিদ ছেড়ে যান। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুসল্লিদের একটি অংশ চলে গেলেও রাত ১০টার দিকে অন্য একটি অংশের ৫০-৬০ জন দল বেঁধে মাজারটিতে ঢুকে পড়ে। তারা ভেঙে মাজারটি গুঁড়িয়ে দেয়। হামলাকারীরা সেখানে থাকা দুটি কবরসহ একটি টিনের ঘর পুরোপুরি ভেঙে দেয়। অপর একটি ঘরের বেড়ার টিনে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। শুকুর আলী ফকিরের বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেই মসজিদে সমবেত হতে থাকেন মুসল্লিরা। এদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বহিরাগত। তারাই মাজারে গান-বাজনা বন্ধের দাবিতে বেশি সোচ্চার ছিলেন। স্থানীয় কিছু লোকও ছিলেন সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না।’ রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ মুসল্লি মাজারে হামলা করেন। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় লোক। 
প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের স্ত্রী আমেনা বেগম এ বিষয়ে বলেন, বহু বছর ধরেই তারা ওরস পালন করেন। মাজারে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে আসছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুসল্লিরা নিষেধ করার পর তারা ওরস বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এর পরও রাইতে ৫০-৬০ জন লোক আইসা মাজার, ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দিছে। ভয়ে পোলারা বউ-পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল। কইছে মামলা করতে।’
তাঁর ছেলে আক্কাস আলী জানান, পুলিশের সহায়তায় শুক্রবার বিকেলে তিনি ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এতে আরও ৭০০-৮০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেছেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহর দাবি, ওই মাজারে মাদকের কারবার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। এসবের সত্যতা নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার উপজেলা ইমাম পরিষদ ও তাদের কয়েকজন নেতা মাজারের পাশের একটি মসজিদে যান।
মুফতি সানাউল্লাহর ভাষ্য, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গান-বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধের কথা জানান, তখন এশার নামাজ শেষে আমরা চলে আসি।’ এর পর তারা শুনেছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে। তাঁর ভাষ্য, তাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান, ভাঙচুর নয়।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মামলা করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
 

আরও পড়ুন

×