ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

কারামুক্তির পর জাকির খানের শোডাউন, শহরে আতঙ্ক

কারামুক্তির পর জাকির খানের শোডাউন, শহরে আতঙ্ক

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান সমকাল

 নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:২৭

কারাগার থেকে বের হয়ে অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৩৩ মামলার আসামি হলেও, ২৬টিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বিচারাধীন তিন মামলায় জামিন এবং বাকি চার মামলায় সাজা ভোগ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান জাকির। আগে থেকে কারাগারের সামনে জড়ো হওয়া বিপুলসংখ্যক অনুসারী তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে। পরে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নগরীতে শোডাউন করেন জাকির। অনুসারীরা ব্যান্ড বাজিয়ে, স্লোগান দিয়ে উৎসব করেন। এ সময় খোলা জিপে জাকির জাতীয় পতাকা, বিএনপির দলীয় এবং ফিলিস্তিনের পতাকা নেড়ে উল্লাস করেন। শোডাউনের কারণে নগরীজুড়ে তীব্র যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তি পোহান।

জাকিরের মুক্তি ও শোডাউনে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিপুল সংবর্ধনা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, জাকিরের শোডাউনের সঙ্গে দলের সম্পৃক্ততা নেই; অনুসারীরা সংবর্ধনা দিয়েছে। দলীয় চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করলে আমরা তাঁকে সহযোগিতা করব। তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের গডফাদাররা যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, আমরা কেউই আর তেমনটি চাই না।
কারা সুপার ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, ১৯৯৪ সালে জাকির খানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে ১৪ বছর সাজা দেন। সর্বোচ্চ আদালতে তা কমে পাঁচ বছর হয়। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় রোববার জাকিরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জাকিরের আইনজীবী রবিউল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মুক্তি পেয়েছেন জাকির খান। খালাস ছাড়াও যেসব মামলা বিচারাধীন, সেগুলোতে জামিনে আছেন তিনি।
জাকিরের শোডাউনে নগরবাসী উদ্বিগ্ন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, ‘জাকির খান কে, কেন বিদেশে পলাতক কিংবা জেলে ছিলেন, তা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে। জাকির ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। শহরে চাউর– প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পলাতক ছেলে আজমেরী ওসমানের ক্যাডাররা অস্ত্র ও গাড়ি নিয়ে জাকিরের সঙ্গে শোডাউন করেছে। তাঁর পেছনে এত মানুষ আমাদের রাজনীতির দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করছে। প্রশাসনকে বলব– মানুষের আতঙ্ক নিরসনে কাজ করুন।’
মুক্তি পেলেও জাকির মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না বলে জানান তাঁর ভাই জিকু খান। তিনি বলেন, ‘জেলগেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাকির। নতুন করে কোনো বক্তব্য নেই।’
কারাগারের সামনে জাকির খান বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা আমরা বাস্তবায়ন করব। শরীরের চামড়ার জুতা বানিয়ে দিলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি ঋণ শোধ হবে না। বর্তমান প্রশাসন আগামী দিনেও থাকবে, আমরা সহযোগিতা করব।’ ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদ না করলে মুসলমানের কাতারে থাকব না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাকিরের সংবর্ধনায় বিপুলসংখ্যক উপস্থিতির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে শামীম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জের গডফাদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার জাকির। বিদেশে থেকেও অনুসারীদের খোঁজ রেখেছেন। এ জন্যই তাঁর সুদিনে অনুসারীরা পেছনে দাঁড়িয়েছে।’

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা (বর্তমান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব) তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই তৎকালীন বিকেএমইএ সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। ওই মামলার প্রধান আসামি জাকির খান। মামলার পর থেকে বিদেশে পলাতক ছিলেন। প‌রিচয় গোপন ক‌রে ২০২২ সা‌লে দে‌শে ফির‌লে, ওই বছ‌রের ৩ সে‌প্টেম্বর গ্রেপ্তার হন জাকির।
গতকাল তৈমূর আলম সমকালকে বলেন, ‘এটি আমাদের ও নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য দুর্ভাগ্যের। সাব্বির ব্যক্তিগত কারণে মারা যায়নি। নারায়ণগঞ্জের মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে খুন হয়। সেই মামলার আসামি এমন সংবর্ধনা পেলে কিছু বলার থাকে না!’

আরও পড়ুন

×